পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○bペ রবীন্দ্র-রচনাবলী অর্থ টাকে সম্পূর্ণ নষ্ট ক’রে দিয়ে এ হল ব্যাকুলতা ; এতে বলার সঙ্গে সঙ্গেই বলা হচ্ছে ‘বলতে পারছি নে । এই অনির্বচনীয়তার স্বযোগ নিয়ে নানা কবি নানারকম অত্যুক্তির চেষ্টা করে। স্বযোগ নয় তো কী ; যাকে বলা যায় না তাকে বলবার স্থযোগই কবির সৌভাগ্য। এই স্বযোগেই কেউ লাবণ্যকে ফুলের গন্ধের সঙ্গে তুলনা করতে পারে, কেউ বা নি:শব্দ বীণাধানির সঙ্গে— অসংগতিকে আরও বহু দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে । লাবণ্যকে কবি যে লাবণি বলেছেন সেও একটা অধীরতা । প্রচলিত শব্দকে অপ্রচলিতের চেহারা দিয়ে ভাষার অভিধানিক সীমানাকে অনিদিষ্ট ভাবে বাড়িয়ে দেওয়া হল । হৃদয়াবেগে যার সীমা পাওয়া যায় না তাকে প্রকাশ করতে গেলে সীমাবদ্ধ ভাষার বেড়া ভেঙে দিতে হয় । কবিত্বে আছে সেই বেড়া ভাঙার কাজ । এইজন্তেই মা তার সস্তানকে যা নয় তাই ব’লে এককে আর ক’রে জানায় । বলে চাদ, বলে মানিক, বলে সোনা । এক দিকে ভাষা স্পষ্ট কথার বাহন, আর-এক দিকে অস্পষ্ট কথারও । এক দিকে বিজ্ঞান চলেছে ভাষার সিড়ি বেয়ে ভাষাসীমার প্রত্যস্তে, ঠেকেছে গিয়ে ভাষাতীত সংকেতচিহ্নে ; আর-এক দিকে কাব্যও ভাষার ধাপে ধাপে ভাবনার দূরপ্রান্তে পৌছিয়ে অবশেষে আপন বাধা অর্থের অন্যথা করেই ভাবের ইশারা তৈরি করতে বলেছে । Q. জানার কথাকে জানানো আর হৃদয়ের কথাকে বোধে জাগানো, এ ছাড়া ভাষার আর-একটা খুব বড়ো কাজ আছে । সে হচ্ছে কল্পনাকে রূপ দেওয়া । এক দিকে এইটেই সবচেয়ে অদরকারি ক্যঙ্গ, আর-এক দিকে এইটেতেই মানুষের সবচেয়ে আনন্দ । প্রাণলোকে স্বষ্টিব্যাপারে জীবিকার প্রয়োজন যত বড়ো জায়গাই নিক-না, অলংকরণের আয়োজন বড়ো কম নয় । গাছপাল থেকে আরম্ভ ক’রে পশুপক্ষী পর্যন্ত সর্বত্রই রঙে রেখায় প্রসাধনের বিভাগ একটা মস্ত বিভাগ। পাশ্চাত্য মহাদেশে যে ধর্মনীতি প্রচলিত, পশুরা তাতে অসম্মানের জায়গা পেয়েছে । আমার বিশ্বাস, সেই কারণেই যুরোপের বিজ্ঞানীবুদ্ধি জীবমহলে সৌন্দর্ধকে একান্তই কেজো আদর্শে বিচার করে এসেছে। প্রকৃতিদত্ত সাজে সজায় ওদের বোধশক্তি প্রাণিক প্রয়োজনের বেশি দূরে যে যায়, এ কথা যুরোপে সহজে স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু সৌন্দর্য একমাত্র মানুষের কাছেট প্রয়োজনের অতীত আনন্দের দূত হয়ে এসেছে আর পশুপক্ষীর মুখবোধ