পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০১

বাংলাভাষা-পরিচয় "br○ একান্তভাবে কেবল প্রাণধারণের ব্যবসায়ে সীমাবদ্ধ, এমন কথা মানতেই হবে তার কোনো কারণ নেই। যাই হোক, সৌন্দর্ধকে মানুষ অহৈতুক বলে মেনে নিয়েছে। ক্ষুধা তৃষ্ণ মানুষকে টানে প্রাণযাত্রার গরজে ; সৌন্দর্বও টানে, কিন্তু তাতে প্রয়োজনের তাগিদ নেই । প্রয়োজনের সামগ্রীর সঙ্গে আমরা সৌন্দর্ধকে জড়িয়ে রাখি, সে কেবল প্রয়োজনের একান্ত ভারাকর্ষণ থেকে মনকে উপরে তোলবার জন্তে । প্রাণিক শাসনক্ষেত্রের মাঝখানে সৌন্দর্বের একটি মহল আছে যেখানে মানুষ মুক্ত, তাই সেখানেই মাহুষ পায় বিশুদ্ধ আনন্দ । L মানুষ নির্মাণ করে প্রয়োজনে, স্বষ্টি করে আনন্দে । তাই ভাষার কাজে মানুষের দুটো বিভাগ আছে— একটা তার গরজের ; আর-একটা তার খুশির, তার খেয়ালের । আশ্চর্যের কথা এই যে, ভাষার জগতে এই খুশির এলেকায় মানুষের যত সম্পদ সযত্বে সঞ্চিত এমন আর-কোনো অংশে নয় । এইখানে মাস্থ্য স্থষ্টিকর্তার গৌরব অনুভব করেছে, সে পেয়েছে দেবতার আসন । স্থই বলতে বোঝায় সেই রচনা যার মুখ্য উদ্দেশু প্রকাশ । মানুষ বুদ্ধির পরিচয় দেয় জ্ঞানের বিষয়ে, যোগ্যতার পরিচয় দেয় কৃতিত্ত্বে, আপনারই পরিচয় দেয় স্থষ্টিতে । বিশ্বে যখন আমরা এমন-কিছুকে পাই যা রূপে রসে নিরতিশয়ভাবে তার সত্তাকে আমাদের চেতনার কাছে উজ্জল করে তোলে, যাকে আমরা স্বীকার না করে থাকতে পারি নে, যার কাছ থেকে অন্ত কোনো লাভ আমরা প্রত্যাশাই করি নে, আপন আনন্দ্বের দ্বারা তাকেই আমরা আত্মপ্রকাশের চরম মূল্য দিই। ভাষায় মানুষের সবচেয়ে বড়ো স্বষ্টি সাহিত্য । এই স্বষ্টিতে যেটি প্রকাশ পেয়েছে তাকে যখন চরম বলেই মেনে নিই তখন লে হয় আমার কাছে তেমনি সত্য যেমন সত্য ঐ বটগাছ । সে যদি এমন-কিছু হয় সচরাচরের সঙ্গে যার মিল না থাকে, অথচ যাকে নিশ্চিত প্রতীতির সঙ্গে স্বীকার করে নিয়ে বলি এই যে তুমি', তা হলে সেও সত্য হয়েই সাহিত্যে স্থান পায়, প্রাকৃত জগতে যেমন সত্যরূপে স্থান পেয়েছে পর্বত নদী । মহাভারতের অনেক-কিছুই আমার কাছে সত্য ; তার সত্যতা সম্বন্ধে ঐতিহাসিক, এমন-কি প্রাকৃতিক কোনো প্রমাণ না থাকতে পারে, এবং কোনো প্রমাণ আমি তলব করতেই চাই নে, তাকে সত্য ব'লে অস্থভব করেছি এই যথেষ্ট। আমরা যখন নতুন জায়গায় ভ্রমণ করতে বেরোই তখন সেখানে নিত্য অভ্যালে আমাদের চৈতন্ত মলিন হয় নি বলেই সেখানকার অতি সাধারণ দৃপ্ত সম্বন্ধেও আমাদের জহুভূতি স্পষ্ট থাকে ; এই স্পষ্ট অনুভূতিতে যা দেখি তার সত্যতা উজ্জল, তাই লে আমাদের আনন্দ দেয়। তেমনি সেই সাহিত্যকেই ቘቁplog