পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় હ ૧ আমরা আপনাকে জানি। সাহিত্য বহু বিচিত্রভাবে আমাদের আপনাকে জানার জগৎ, অথচ সে জগতে আমাদের কোনো দায়িত্ব নেই। সাহিত্যে মানুষের আত্মপরিচয়ের হাজার হাজার ঝরনা বয়ে চলেছে— কোনোটা পঙ্কিল, কোনোটা স্বচ্ছ, কোনোটা ক্ষীণ, কোনোট পরিপূর্ণপ্রায় । কোনোট মামুষের মরবার সময়ের লক্ষণ জানায়, কোনোটা জানায় তার নবজাগরণের। বিচার করলে দেখা যায়, মানুষের সাহিত্যরচনা তার দুটো পদার্থ নিয়ে । এক হচ্ছে যা তার চোখে অত্যস্ত করে পড়েছে, বিশেষ করে মনে ছাপ দিয়েছে । তা হাস্যকর হতে পারে, অদ্ভূত হতে পারে, সাংসারিক আবশ্বকতা অনুসারে অকিঞ্চিংকর হতে পারে। তার মূল্য এই যে, তাকে মনে এনেছি একটা স্বম্পষ্ট ছবিরূপে, ঘটনারূপে ; অর্থাং সে আমাদের অনুভূতিকে অধিকার করেছে বিশেষ ক'রে, ছিনিয়ে নিয়ে চেতনার ক্ষীণতা থেকে । সে হয়তো অবজ্ঞা বা ক্রোধ উদ্রেক করে, কিন্তু সে স্পষ্ট। যেমন মন্থর বা ভাড় দত্ত। দৈনিক ব্যবহারে তার সঙ্গ আমরা বর্জন করে থাকি । কিন্তু সাহিত্যে যখন তার ছবি দেখি তখন হেসে কিংবা কোনো রকমে উত্তেজিত হ’য়ে ব’লে উঠি, “ঠিক বটে !” এইরকম কোনো চরিত্রকে বা ঘটনাকে নিশ্চিত স্বীকার করাতে আমাদের আনন্দ আছে । নিয়তই বহু লক্ষ পদার্থ এবং অসংখ্য ব্যাপার যা আমাদের জীবনমনের ক্ষেত্র দিয়ে চলেছে তা প্রবলরুপে আমাদের অভিজ্ঞতার বিষয় হয় না। কিন্তু বা-কিছু স্বভাবত কিংবা বিশেষ কারণে আমাদের চৈতন্যকে উদ্রিব্রু ক’রে আলোড়িত করে সেই-সব অভিজ্ঞতার উপকরণ আমাদের মনের ভাণ্ডারে জমা হতে থাকে, তারা বিচিত্রভাবে আমাদের স্বভাবকে পূর্ণ করে। মামুষের সাহিত্য মান্থযের সেই সম্ভাবিত, সম্ভবপর, অসংখ্য অভিজ্ঞতায় পরিপূর্ণ। জাভাতে দেখে এলুম আশ্চর্ষ নৃত্যকৌশলের সঙ্গে হনুমানে ইন্দ্ৰজিতে লড়াইয়ের নাট্যাভিনয় । এই দুই পৌরাণিক চরিত্র এমন অন্তরঙ্গভাবে তাদের অভিজ্ঞতার জিনিস হয়ে উঠেছে যে, চার দিকের অনেক পরিচিত মামুষের এবং প্রত্যক্ষ ব্যাপারের চেয়ে এদের সত্তা এবং আচরণ তাদের কাছে প্রবলতররূপে স্বনিশ্চিত হয়ে গেছে । এই স্বনিশ্চিত অভিজ্ঞতার আনন্ন প্রকাশ পাচ্ছে তাদের নাচে গানে । সাহিত্যের আর-একটা কাজ হচ্ছে, মাছুষ যা অত্যন্ত ইচ্ছা করে সাহিত্য তাকে রূপ দেয় । এমন করে দেয় যাতে লে আমাদের মনের কাছে প্রত্যক্ষ হয়ে ওঠে। সংসার অসম্পূর্ণ তার ভালোর সঙ্গে মৰ্ম্ম জড়ানো, সেখানে আমাদের আকাজা ভরপুর মেটে না। সাহিত্যে মাহুষ আপনার সেই আকাঙ্ক্ষণ-পূর্ণতার জগংস্কৃষ্টি করে চলেছে। তার ইচ্ছার আদর্শে বা হওয়া উচিত ছিল, বা হয় নি, তাকে মূর্তিমান ক’রে মেটাচ্ছে সে