পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

లీఏ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সেখানে সাহিত্য পেয়েছে চলনশীল প্রাণ, আর চলতি ভাষা পেয়েছে মননশীলতার ঐশ্বৰ। আমাদের ঘোমটা টানার দেশে সেটা তেমন করে প্রচলিত হয় নি ; কিন্তু হবার বাধা বাইরের শাসনে, স্বভাবের মধ্যে নয় । সে অনেক দিনের কথা । তখন রামচন্দ্র মিত্র ছিলেন প্রেসিডেন্সি কলেজে বাংলার অধ্যাপক। তার একজন ছাত্রের কাছে শুনেছি, পরীক্ষা দিতে যাবার পূর্বে বাংলা রচনা সম্বন্ধে তিনি উপদেশ দিয়ে বলেছিলেন, ‘বাবা, সুশীতলসমীরণ লিখতে গিয়ে যত্বে ণত্বে কিংবা হ্রস্ব দীর্ঘ স্বরে যদি ধাধা লাগিয়ে দেয় তা হলে লিখে দিয়ো ঠাগু হাওয়া । সেদিনকার দিনে এটি সোজা কথা ছিল না। তখনকার সাধু বাংলা ঠাও হাওয়া কিছুতেই সইতে পারত না, তখনকার রুগীরা যেমন ঠাণ্ডা জল খেতে পেত না তৃষ্ণায় ছাতি ফেটে গেলেও । সাধু ভাষার সঙ্গে চলতি ভাষার প্রধান তফাতটা ক্রিয়াপদের চেহারার তফাত নিয়ে। ‘হচ্ছে ‘করছে'কে যদি জলচল করে নেওয়া যায় তা হলে জাতঠেলাঠেলি অনেকটা পরিমাণে ঘোচে । উভঙ্কের গুরুদক্ষিণ। আনবার সময় তক্ষক বিঘ্ন ঘটিয়েছিল, এইটে থেকেই সর্পবংশধ্বংসের উৎপত্তি : এর ক্রিয়াক'টাকে অল্প একটু মোচড় দিয়ে সাধু ভাষার ভঙ্গী দিলেই কালীসিংহের মহাভারতের সঙ্গে একাকার হয়ে যায়। তার কাজে ও কথায় অসংগতি : মুখের ভাষাতেও এটা বলা চলে, আবার এও বলা যায় ‘র্তার কাজে কথায় মিল নেই’। ‘বাহুকি ভীমকে আলিঙ্গন করলেন এ কথাটা মুখের ভাষায় অশুচি হয় না, আবার ‘বাস্থকি ভীমের সঙ্গে কোলাকুলি করলেন’ এটাতেও বোধ হয় নিন্দের কারণ ঘটে না । বিজ্ঞানে দুর্বোধ তথ্য আছে, কিন্তু তা নিয়ে আমাদের সাধু ভাষাও গলদঘর্ম হয়, আবার চলতি ভাষারও চোখে অন্ধকার ঠেকে। বিজ্ঞানের চর্চা আমাদের দেশে যখন ছড়িয়ে পড়বে তখন উভয় ভাষাতেই তার পথ প্রশস্ত হতে থাকবে। নতুন বানানো পারিভাষিকে উভয় পক্ষেরই হবে সমান স্বত্ব । Se এইখানে এ কথা স্বীকার করতেই হবে, সংস্কৃতের আশ্রয় না নিলে বাংলা ভাষা অচল। কী জ্ঞানের কী ভাবের বিষয়ে বাংলা সাহিত্যের যতই বিস্তার হচ্ছে ততই সংস্কৃতের ভাণ্ডার থেকে শব্দ এবং শব্দ বানাবার উপায় সংগ্রহ করতে হচ্ছে। পাশ্চাত্য ভাষাগুলিকেও এমনি করেই গ্ৰীক-লাটিনের বশ মানতে হয়। তার পারিভাষিক শৰাগুলো গ্ৰীক লাটিন থেকে ধার নেওয়া কিংবা তারই উপাদান নিয়ে তারই ছাচে