পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় i 8• ጳ সার্থক করে তোলে, শিক্ষকের ব্যাখ্যার দ্বারা তা যখন সমর্থনের অপেক্ষা করে তখন কবিতার মন্ত্রশক্তি হারায় তার গুণ । ছন্দ আছে জাদুর কাজে, খেয়াল গেলে বুদ্ধিকে অগ্রাহ করতে সে সাহস করে । সাহিত্যের মধ্যে কারুকাজ, কাব্যে যার প্রাধান্ত, তার একটা দিক হচ্ছে শব্দের বাছাই-সাজাই করা । কালে কালে প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে ভাষায় শব্দ জমে যায় বিস্তর। তার মধ্যে থেকে বেছে নিতে হয় এমন শৰ বা কল্পনার ঠিক ফরমাশটি মানতে পারে পুরো পরিমাণে । 聽 রামপ্রসাদ বলেছেন : আমি করি দুখের বড়াই । ‘বড়াই'-বর্গের অনেক ভারী ভারী কথা ছিল : গর্ব করি, গৌরব করি, মাহাত্ম্য বোধ করি । কিন্তু “দুঃথকেই বড়ে ক’রে নিয়েছি' বলবার জন্তে অমন নিতান্ত সহজ অর্থাৎ ঠিক কথাটি বাংলাভাষায় আর নেই । যেমন আছে শব্দের বাছাই তেমনি আছে ভাবপ্রকাশের বাছাইয়ের কাজ । বাউল বলতে চেয়েছে, চার দিকে অচিন্তনীয় অপরিসীম রহস্ত, তারই মধ্যে চলেছে জীবনযাত্রা । সে বললে— পরান জামার স্রোভেন্ন জীয়া ( জামায় ভাসাইল কোন ঘাটে )। जांप्न चांकांब्र नरिइ बांकांब्र, बांकांब्र निश्हे९-5ांना । আঙ্কারমাঝে কেৰল ৰাজে লহরেরই মালা । তার তলেতে কেবল চলে নিহুইৎ রাতের ধারা, সাথের সাৰি চলে বাতি, নাই গে। কুলৰুিনাৱ । নানা রহস্তে একলা-জীবনের গতি, যেন চার দিকের নিস্কং অন্ধকারে স্রোতেভাসানো প্রদীপের মতো— এমন সহজ উপমা মিলবে কোথায় । একটা শৰ-বাছাই লক্ষ্য করা যাক : লহরেরই মালা । উর্মি নয়, তরঙ্গ নয়, ঢেউ নয়, শৰ জাগাচ্ছে জলে ছোটো ছোটো চাঞ্চল্য, ইংরেজিতে যাকে বলে ripples । অন্ধকারের তলায় তলায় রাত্রির ধারা চলেছে, এ ভাবট মনে হয় যেন আধুনিক কবির ছোয়াচ-লাগা। রাত্রি স্তন্ধ হয়ে আছে, এইটেই সাধারণত মুখে আসে। তার প্রহরগুলি নিঃশৰ নিলক্ষ্য ম্রোতের মতো বয়ে চলেছে, এ উপমাটায় হালের টাকশালের ছাপ লেগেছে বলেই মনে হয় । শৰ-বাছাই ভাৰ-বাছাইয়ের শিল্পকাজ চলেছে পৃথিবীর সাহিত্য জুড়ে। সঙ্গে সঙ্গে ছন্দে চলেছে ধ্বনির কাজ । সেটা গন্তে চলে জলক্ষ্যে, পস্তে চলে প্রত্যক্ষে ।