পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪১৬ । রবীন্দ্র-রচনাবলী হয় না, তখন হয় ‘ভোলানো’ । তেমনি : ডুবোনো-ডোবানো, ছুটোনো = ছোটানো । কিন্তু ঘুমোনো কখনোই হয় না ঘোমানো’, ‘কুলোনো হয় না কোলানো কেন। অকৰ্মক বলে কি ওর স্বতন্ত্র বিধান । দেখা যাচ্ছে বাংলা উচ্চারণে ইকার এবং উকার খুব কর্মিষ্ঠ, একার এবং ওকার ওদের শরণাগত, বাংলা অকার এবং আকার উৎপাত সইতেই আছে । স্বরবর্ণের কোঠায় আমরা ঋ’কে ঋণস্বরূপে নিয়েছি বর্ণমালায়, কিন্তু উচ্চারণ করি ব্যঞ্জন বর্ণের— রি। সেইজন্তে অনেক বাঙালি ‘মাতৃভূমি'কে বলেন ‘মাত্রিভূমি । যে কবি র্তার ছন্দে ঋকারকে স্বরবর্ণরূপে ব্যবহার করেন তার ছন্দে ঐ বর্ণে অনেকের রসন ঠোকর খায় । সাধারণত বাংলায় স্বরের দীর্ঘ উচ্চারণ নেই। তবু কোনো কোনো স্থলে স্বরের উচ্চারণ কিছু পরিমাণে বা সম্পূর্ণ পরিমাণে দীর্ঘ হয়ে থাকে। হসন্ত বর্ণের পূর্ববর্তী স্বরবর্ণের দিকে কান দিলে সেটা ধরা পড়ে, যেমন 'জল' । এখানে জ'এ যে অকার আছে তার দীর্ঘতা প্রমাণ হল জিলা' শব্দের জ'এর সঙ্গে তুলনা করে দেখলে। ‘হাত’ আর "হাতা'য় প্রথমটির হা দীর্ঘ, দ্বিতীয়টির হ্রস্ব । পিঠ' আর পিঠে', 'ভূত' আর "ভূতো’, ‘ঘোল’ আর ‘ঘোলা’– তুলনা করে দেখলে কথাটা স্পষ্ট হবে। সংস্কৃতে দীর্ঘশ্বরের দীর্ঘতা সর্বত্রই, বাংলায় স্থানবিশেষে । কথায় ঝোক দেবার সময় বাংলা স্বরের উচ্চারণ সব জায়গাতেই দীর্ঘ হয়, যেমন : ভা—রি তো পণ্ডিত, কে—বা কার খোজ রাখে, আ—জই যাব, হল—ই বা, অবা—ক করলে, হাজা—রো লোক, কী— যে বকে, এক ধা—র থেকে লাগা—৪ মার। যুক্তবর্ণের পূর্বে সংস্কৃতে স্বর দীর্ঘ হয়, বাংলায় তা হয় না । বাংলায় একটা অতিরিক্ত স্বরবর্ণ আছে যা সংস্কৃত ভাষায় নেই। বর্ণমালায় সে ঢুকেছে একারের নামের ছাড়পত্র নিয়ে, তার জন্তে স্বতন্ত্র আসন পাত হয় নি। ইংরেজি bad শব্দের a তার সমজাতীয়। বাংলায় তার বিশেষ বানান করবার সময় আমরা য ফলায় আকার দিয়ে থাকি। বাংলায় আমরা যেটাকে বলি অস্ত্যন্থ ঘ, চ বর্গের জ'এর সঙ্গে তার উচ্চারণের ভেদ নেই । য’এর নীচে ফোটা দিয়ে আমরা আর-একটা অক্ষর বানিয়েছি তাকে বলি ইয়। সেটাই সংস্কৃত অস্ত্যস্থ য । -് সংস্কৃত উচ্চারণ-মতে 'যম' শব্দ 'য়ম’ । কিন্তু ওটাতে জিম উচ্চারণের অজুহাতে য়'র ফোটা দিয়েছি সরিয়ে । ‘নিয়ম’ শব্দের বেলায় য়'র ফোট রক্ষে করেছি, তার উচ্চারণেও সংস্কৃত বজায় আছে। কিন্তু যফলা-আকারে ( f ) য়’কে দিয়েছি খেদিয়ে আর আ’টাকে দিয়েছি বাকা করে। সংস্কৃতে ‘কাল’ শব্দের উচ্চারণ নিয়াস', বাংলার