পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8२रै রবীন্দ্র-রচনাবলী বিশেষণেও লাগে, যেমন : ঠেলা গাড়ি, ভাঙা রাস্তা। কিন্তু তি দিয়ে একটা প্রত্যয় আছে যেটা বিশেষভাবে বিশেষণেরই, যেমন : চলতি গাড়ি, কাটতি মাল, ঘাটতি ওজন। মুশকিল এই ষে, সব জায়গাতেই কাজে লাগাতে পারি নে, কেন পারি নে তারও স্পষ্ট কৈফিয়ত পাওয়া যায় না । ‘গড়তি টেবিল’ কিংবা ‘কথা-কইতি খোকা' বলতে মুখে বাধে, এর কোনো সংগত কারণ ছিল না। কাজ চালাবার জন্তে অন্ত কোনো প্রত্যয় খুঁজতে হয়, সব সময়ে খুঁজে পাওয়া যায় না। যে টেবিল গড়া চলছে তাকে সংস্কৃতে বোধ হয় ‘সংঘটমান বলা চলে, কিন্তু বাংলায় কিছু হাংড়ে পাই নে । ষে খোকা কথা কয় ইএ প্রত্যয়ের সাহায্যে তাকে ‘কথা-কইয়ে’ বলা যেতে পারে। অথচ ঐ প্রত্যয় দিয়ে ‘হাসিয়ে’ ‘কাদিয়ে’ বলা নিষিদ্ধ । কাদার বেলায় আর-এক প্রত্যয় খুঁজে পাওয়া যায় উনে, বলি কাদ্বনে’। কিন্তু হাস্থনে বললে হাসির উদ্রেক হবে। অথচ নাচুনে চলতে পারে। দৌড় নে’ কথার দরকার আছে কিন্তু বলা হয় না, কেউ যদি সাহস ক’রে বলে খুশি হব। দ্রুতধাবনশীল ঘোড়া’র চেয়ে ‘জোরে-দৌড় নে ঘোড়া কানে ভালোই শোনায় । এই শব্দগুলোর প্রত্যয়টাকে ঠিক উনে বলা চলবে না ; নাচুনে শব্দের গোড়া হচ্ছে : নাচন+ইয়া= নাচনিয়া। বাংলা ভাষার প্রকৃতি ই এবং আ'কে উ এবং এ করে দিয়েছে, হয়ে উঠেছে ‘নাচুনে । এই কথাটা মনে ক’রে কৌতুক লাগে যে, দুটো অসদৃশ স্বরবর্ণকে ঠেলে দিয়ে কোথা থেকে উ এবং এ যায় জুটে । সংস্কৃতে প্রত্যয় নিয়ম মেনে চলে, বাংলায় প্রায়ই ফাকি দেয়। বেস্থর-বিশিষ্টকে বলি বেনুরা’ (চলতি উচ্চারণ "বেনুরো' ) ; মুর-বিশিষ্টকে বলি নে "স্বরা’ বা ‘স্বরো", আর কী বলি তাও তো ভেবে পাই নে । ‘স্বরেলা গলা' হয়তো বলে থাকি জানি নে, অন্তত বলতে দোষ নেই। বালি-বিশিষ্টকে বলি বালিয়া', অপভ্রংশে বেলে’ ; কিন্তু চিনি-বিশিষ্টকে বলব না ‘চিনিয়া’ বা 'চিনে', চিনদেশজ বাদামকে ‘চিনে বাদাম’ বলতে আপত্তি করি নে। অনা প্রত্যয়-যোগে হয় ‘পাও’ থেকে ‘পাওনা’, ‘গাও’ থেকে ‘গাওনা" । কিন্তু ধাও থেকে ধাওনা হয় না। অন্ত প্রত্যয় যোগে হতে পারে ধাওয়াই’। ‘কুট’ থেকে 'কোটনা’ , ‘ফুট’ থেকে 'ফুটকি’ হয়, ‘ফোটনা' হয় না। 'বাট' থেকে বাটনা' হয় ; ‘ছাট’ থেকে ‘ছাটাই' হবে, ‘ছাটনা' হবে না। সংস্কৃতে মং প্রত্যয় কোথাও "মান’ কোথাও ‘বান’ হয়, কিন্তু তার নিয়ম পাকা । সেই নিয়ম মেনে যেখানে দরকার 'মান' বা ‘বান’ লাগিয়ে দেওয়া যায়। সংস্কতে ‘শক্তিমান বলব, “ধনবান’ বলব ; বাংলায় একটাকে বলব জোরালো আর-একটাকে