পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8રના রবীন্দ্র-রচনাবলী একটা ক্টোক দেয়। সব চৌকি সরিয়ে দাও, অর্থাৎ একটাও বাকি রেখে না। সব ভিখিরিই বাঙালি, অর্থাৎ নির্বিশেষে বাঙালি । ‘সব’ প্রয়োগের সঙ্গে সঙ্গে ‘গুলো' প্রয়োগটা যোগ দিতে চায়, যেমন : সব চৌকিগুলোই ভাঙা, সব ভিখিরিগুলোই চেচাচ্ছে । এখানে সব’ বোঝাচ্ছে একান্ততা, আর ‘গুলো’ বোঝাচ্ছে বহুবচন । বহুবচনে এক সময়ে সব ব্যবহৃত হত। কবিতায় এখনো দেখা যায়, যেমন : পাখিগৰ তোমাসব ইত্যাদি । আমরা বলি : কাক্রিরা সব কালো। বহুবচনের রা বিভক্তির সঙ্গে জোড়া লাগে সব শৰ : এরা সব গেল কোথায়। শুধু ‘এরা গেল কোথায়' বললেই চলে, কিন্তু ‘সব’ শব্দের দ্বারা সমষ্টির উপর জোর দেওয়া হচ্ছে । এই ‘সব' শব একবচনকে বহুবচন করে না, বহুবচনকে স্বনির্দিষ্ট করে । ‘সবাই’ শব্দে আরও বেশি জোর লাগে : এরা যে সবাই চলে গেছে, কিংবা, চৌধুরীদের সবাইকেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। ‘সব’ শব্দের সমার্থক হচ্ছে ‘সকল' : এরা সকলেই চ’লে গেছে, কিংবা, চৌধুরীদের সকলকেই নিমন্ত্রণ করা হয়েছে। কিন্তু সকল' শব্দের প্রয়োগ সব শব্দের চেয়ে সংকীর্ণ। এই প্রসঙ্গে আমাদের ভাষার একটা বিশেষ ভঙ্গীর কথা বলি । ‘সব’ শব্দের অর্থে কোনো দুষণীয়তা নেই, যত সর্বনাম শব্দটাও নিরীহ । কিন্তু দুটোকে এক করলে সেই জুড়িশব্দটা হয়ে ওঠে নিন্দার বাহন । ‘মুখ’ ‘কুঁড়ে কিংবা 'লক্ষ্মীছাড়া প্রভৃতি কটুম্বাদ বিশেষণ ঐ ‘ধত সব শক্সটাকে বাহন ক’রে ভারায় যেন মুখ লিট্‌কোতে আসে, যথা : যত সব বাদর, কিংবা কুঁড়ে, কিংবা লক্ষ্মীছাড়া। এখানে বলা উচিত ঐ ‘মৃত’ শব্দটার মধ্যেই আছে বিষ । যত বাদর এক জায়গায় জুটেছে' বললেই যথেষ্ট অকথ্য বলা হয়। লক্ষ্য করবার বিষয়টা এই যে, ‘বত' শব্দটা একটা অসম্পূর্ণ সর্বনাম, ‘তত দিয়ে তবে এর সম্পূর্ণতা । ‘তত' বাদ দিলে 'ত' হয়ে পড়ে বেকার, লেগে যায় অনর্থক গালমন্দর কাজে । f বাংলা ভাষায় সর্বনামের খুব ঘটা । নানা শ্রেণীর সর্বনাম, যথা ব্যক্তিবাচক, স্থানবাচক, কালবাচক, পরিমাণবাচক, তুলনাবাচক, প্রশ্নবাচক । ‘মুই এক কালে উত্তমপুরুষ সর্বনামের সাধারণ ব্যবহারে প্রচলিত ছিল, প্রাচীন কাব্যগ্রন্থে তা দেখতে পাই । ‘আমহি ক্রমশ "আমি" রূপ ধরে ওকে করলে কোণঠেলা, ও রইল গ্রাম্য ভাষার আড়ালে । সেকালের সাহিত্যে ওকে দেখা গেছে দীনতাপ্রকাশের কাজে, যেমন : মুঞি অতি অভাগিনী । নিজের প্রতি অবজ্ঞা স্বাভাবিক নয় তাই ওকে সংকোচে সরে দাড়াতে হল। কিন্তু মধ্যমপুরুষের বেলায় বাস্থানে কুণ্ঠার কোনো কারণ নেই, তাই ‘তুই’ শৰে বাধা ঘটে নি,