পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৬০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88९ ब्ररौठ-ब्रध्नावलौ করতে হয়, বাংলায় সেটা উন্থ থাকে। ‘রাস্তাটা সোজা’, ‘পুকুরটা গভীর", যখন বলি তখন সেটাতে তার নিত্য অবস্থা জানায় । কিন্তু বর্ষায় পুকুর ঘোলা হয়েছে এটা আকস্মিক অবস্থা, তাই হওয়ার কথাটা তুলতে হয়। ওর লোভ হয়েছে, মনে হচ্ছে ওর জর হবে— বাক্যগুলিও এইরকম । সাবেক বাংলায় বিশেষ বা সর্বনাম শব্দ -সহযোগে ইংরেজি is ও are -এর অনুরূপ প্রয়োগ পাওয়া যায় : তুমি কে বটে, সে কে বটে, আমি রাজার ঝিয়ারি বটি। অচেতনবাচক শব্দেও চলত, যেমন : ঐ গাছটা কী বটে, এই নদী গঙ্গাই বটে। ‘বটে’ শব্দটা এখনো ভাষায় আছে, বিশেষ ক্টোক দেবার জন্তে, যেমন : লোকটা ধনী বটে । আবার ভঙ্গীর কাজেও লাগে, যেমন : বটে, চালাকি পেয়েছ ! ‘বটে’র সঙ্গে কিন্তু'র যোগ হলে ভঙ্গীটা আরও জমে, যেমন : উনি সর্দারি করেন বটে কিন্তু টের পাবেন । ইংরেজিতে স্বভাব বা অবস্থা বোঝাতে is বা are ব্যতীত বিশেষ্যের গতি নেই, বাংলায় তা নয়। ইংরেজিতে বলাই চাই He is lame, কিন্তু বাংলায় যদি বলি লে খোড়া বটে’ তা হলে হয় বোঝাবে, তার খোড়া অবস্থাটা একটা বিশেষ আবিষ্কার, নয় ওর সঙ্গে একটা অসংগত ব্যাপারের যোগ আছে। যেমন : ও খোড়া বটে কিন্তু দৌড়য় খুব । কিংবা সন্দেহের বিদ্রুপ প্রকাশ করে : তুমি খোড়া বটে ! অর্থাৎ, খোড়া নও যে তা প্রমাণ করতে পারি। বাংলায় থাকার কথাটা যখন জানাই তখন বলি— আছি বা আছে, ছিলে ছিল বা ছিলুম। ‘আছিল’ শব্দেরই সংক্ষেপ ছিল । কিন্তু ভবিষ্কৃতের বেলায় হয় থাকব । বাংলায় ক্রিয়াপদের রূপ প্রধানত এই থাকার ভাবকে আশ্রয় করে । করেছে করছে করেছিল করছিল— শব্দগুলো ‘আছি’ ক্রিয়াপদকে ভিত্তি ক’রে স্থিতির অর্থকেই মুখ্য করেছে। সংস্কৃত ভাষায় এটা নেই, গৌড়ীয় ভাষায় আছে । হিন্দিতে বলে 'চলা থা’, চলেছিল। কাজটা যদিও চলা, তবু থা শব্দে বলা হচ্ছে, চলার অবস্থাতে স্থিতি করেছিল। গতিটা যেন স্থিতির উপরেই প্রতিষ্ঠিত । যে কাজকে নির্দেশ করা হচ্ছে প্রধানত সেই কাজের মূল ধাতুকে দিয়েই ক্রিয়াপদের গড়ন । ‘খ’ ধাতুতে খাওয়া বোঝায়, খাওয়া কাজের সমস্ত ক্রিয়ারূপ এই ধাতুর যোগেই তৈরি। কিন্তু বাংলা ভাষায় অনেকস্থলে কার্বটা ক্রিয়ার রূপ ধরে নি। ক্ষুধা পাওয়া, তৃষ্ণা পাওয়া, প্রতি দিনের ঘটনা ; অথচ বাংলায় সেটা ক্রিয়ারূপ নেয় নি, বিশেষ্ঠের সঙ্গে জোড়া লাগিয়ে বলতে হয় : ক্ষুধা পেল, তৃষ্ণ পেল । হওয়া উচিত ছিল ‘ফুধিল’ ‘তৃফিল’, কাব্যে এইরকম ক্রিয়ারূপের কোনো বাধা নেই। কিন্তু গম্ভবাংলায় ক্রিয়াপদকে অনেক স্থলে গোট বিশেষ্যপদের ভার বয়ে বেড়াতে হয়।