পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাংলাভাষা-পরিচয় 84.4 ঠেলা দিয়ে। গোলেমালে কোথায় মেয়েটি পালালো ঝড়ের আড়ালে, দেখা গেল না। চারি দিকে সন্ধানে ছুটল লোকজন। বড়োবাৰু স্বয়ং হাকতে থাকলেন ‘বিহু বিহু', মিলল না কোনো সাড়া । মুকুন্দ রইল তার সেকেও ক্লাসের গাড়িতে, রুমালে মুখ লুকিয়ে একেবারে চুপ। মেলগাড়ি কখন গেল বেরিয়ে। বৃষ্টির বিরাম নেই। ২৩ আমাদের দেহের মধ্যে নানাপ্রকার শরীরষন্ত্রে মিলে বিচিত্র কর্মপ্রণালীর যোগে শক্তি পাচ্ছে প্রাণ সমগ্রভাবে । আমরা তাদের বহন করে চলেছি কিছুই চিন্তা না করে । তাদের কোনো জায়গায় বিকার ঘটলে তবেই তার দুঃখবোধে দেহব্যবস্থা সম্বন্ধে বিশেষ করে চেতনা জেগে ওঠে । আমাদের ভাষাকেও আমরা তেমনি দিনরাত্রি বহন করে নিয়ে চলেছি। শৰপুঞ্জে বিশেষে বিশেষণে সর্বনামে বচনে লিঙ্গে সন্ধিপ্রত্যয়ে এই ভাষা অত্যন্ত বিপুল এবং জটিল। অথচ তার কোনো ভার নেই আমাদের মনে, বিশেষ কোনো চিস্তা নেই। তার নিয়মগুলো কোথাও সংগত কোথাও অসংগত, তা নিয়ে পদে পদে বিচার ক’রে চলতে হয় না । আমাদের প্রাণশক্তি যেমন প্রতিনিয়ত বর্ণে গন্ধে রূপে রসে বোধের জাল বিস্তার করে চলেছে, আমাদের ভাষাও তেমনি স্বষ্টি করছে কত ছবি, কত রস— তার ছন্দে, তার শব্দে । কত রকমের তার জাদুশক্তি । মানুষ যখন কালের নেপথ্যে অন্তর্ধান করে তখনো তার বাণীর লীলা সজীব হয়ে থাকে ইতিহাসের রঙ্গভূমিতে। আলোকের রঙ্গশালায় গ্রন্থতারার নাট্য চলেছে অনাদিকাল থেকে । তা নিয়ে বিজ্ঞানীর বিস্ময়ের অস্ত নেই। দেশকালে মানুষের ভাবারজের সীমা তার চেয়ে অনেক সংকীর্ণ, কিন্তু বাণীলোকের রহস্তের বিস্ময়করতা এই নক্ষত্ৰলোকের চেয়ে অনেক গভীর ও অভাবনীয়। নক্ষত্ৰলোকের তেজ বহু লক্ষ তারা চলার পথ পেরিয়ে আজ আমাদের চোখে এসে পৌছল ; কিন্তু তার চেয়ে আরও অনেক বেশি আশ্চর্ষ ষে, আমাদের ভাষা নীহারিকাচক্রে ঘূর্ণ্যমান সেই নক্ষত্ৰলোককে স্পর্শ করতে পেরেছে।