পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ぬ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এই বৃহৎ পৃথিবীকে বোধ করিতেই পারে না ; তখন সোনার কাঠি খুজিয়া বাহির করিতে হইবে ; তখনি দূরে পাড়ি দেওয়া চাই ; তখন এমন একটা চেতনার দরকার যাহা আমাদের চোখের কানের মনের রুদ্ধ দ্বারে কেবলই নূতন-নূতন নূতনের আঘাত দিতে থাকিবে- যাহা আমাদের জীর্ণ পর্দাটাকে টুক্র টুকরা করিয়া চিরনূতনকে উদঘাটিত করিয়া দিবে। কী বৃহৎ, কী সুন্দর, কী উন্মুক্ত এই জগৎ ! কী প্রাণ, কী আলোক, কী আনন্দ ] মাহুৰ এই পৃথিবীকে ঘিরিয়া ফেলিয়া কত রকম করিয়া দেখিতেছে, ভাবিতেছে, গড়িতেছে! তাহার প্রাণের, তাহার মনের, তাহার কল্পনার লীলাক্ষেত্র কোনোখানে ফুরাইয়া গেল না। পৃথিবীকে বেষ্টন করিয়া মানুষের এই-ষে মনোলোক ইহার কী অফুরান ও অস্তুত বৈচিত্র্য । সেই-সমস্তকে লইয়াই ষে আমার এই পৃথিবী। এইজন্যই এই-সমস্তটিকে একবার প্রদক্ষিণ করিয়া প্রত্যক্ষ দেখিবার জন্ত মনের মধ্যে আহবান আসে । এই বিপুল বৈচিত্র্যকে তন্ন তন্ন করিয়া নিঃশেষে দেখিবার সাধ্য ও অবকাশ কাহারও নাই। বিশ্বকে দর্শন করিব বলিয়া তাহার সম্মুখে বাহির হইতে পারিলেই দর্শনের ফল পাওয়া যায়। যদিও এক হিসাবে বিশ্ব সর্বত্রই আছে তৰু অলিন্ত ছাড়িয়া, অভ্যাল কাটাইয়া, চোখ মেলিয়া, যাত্রা করিলে তবেই আমাদের দৃষ্টিশক্তির জড়িমা কাটিয়া যায় এবং আমাদের প্রাণ উদবোধিত হইয়া বিশ্বপ্রাণের স্পর্শ উপলব্ধি করে। যে নিশ্চল, ষে নিরুদ্যম, লে লোক সেই জিনিসকেই হারাইয়া বলে বাহা একেবারেই হাতের কাছে আছে। তাই নিকটের ধনকে দুঃখ করিয়া দূরে খুজিয়া বাছির করিতে পারিলেই তাহাকেই অত্যন্ত নিবিড় করিয়া পাওয়া যায় । আমাদের সমস্ত ভ্রমণেরই ভিতরকার আসল উদ্দেগুটি এই— যাহা আছেই, বাহা হারাইতে পারেই না, তাহাকেই, কেবলই প্রতি পদে আছে আছে আছে বলিতে বলিতে চলা— পুরাতনকে কেবলই নূতন নূতন নূতন করিয়া সমস্ত মন দিয়া চুইয়া দুইয়া যাওয়া। - লোহিত সমুদ্র २० :छार्छ ००००