পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পথের সঞ্চয় : د۰ه

ধনের মতো সংকীর্ণ গণ্ডির মধ্যে অত্যন্ত সাবধানে জমা করিয়া তুলিতে থাকে। তখন সে জুমার ক্ষেত্রে বিজ্ঞ সাংসারিকের মতো নিজের একটা বেড়া তুলিয়া দিয়া বৈষয়িকতার স্বাক্ট করে। ইহাও পাপের আর-এক মূর্তি। ইহা আধ্যান্নিককে বাহিক ও পরমার্থকে স্বার্থ করিয়া তোলা । ή ! . মাহুষের মনে এই-বে একটা পাপের বোধ আসে সে জিনিসটা কী তাহ ভাবিয়া দেখিলে দেখা যায় যে, আমাদের ষে মহতী ইচ্ছা আমাদিগকে ভূমার দিকে লইয়া যাইবে তাহাকে ঠিক বিপরীত পথে ক্ষুত্র আহমের অভিমুখে টানিয়া আনিলে কেবল যে দুঃখ ঘটে তাহা নহে— এমন-কি, স্থলবিশেষে হুঃখ না ঘটিতেও পারে— তাহাতে আমরা ভূষাকে হারাই । আমাদের বড়োর দিক, আমাদের সত্যের দিক, নষ্ট হইয়া যায় ; জন্তুর পক্ষে তাহাতে কিছুই আসে বায় না, কিন্তু মানুষের পক্ষে তেমন বিনাশ আর-কিছু নাই । এই বিনাশের বোধ সকলের চিত্তে সমান নহে, এমন-কি কারও কারও চিত্তে অত্যন্ত ক্ষীণ। কিন্তু, মোটের উপর সমগ্র মানবের মনে এই পাপের বোধ দুঃখবোধের চেয়ে অনেক বড়ো হইয়া আছে। এতই বড়ো যে বহু দুঃখের দ্বারা মাহব এই পাপকে ক্ষয় করিতে চায় । পাপ-নামক শব্দের দ্বারা মান্বষ নিজের যে-একটি গভীরতম দুৰ্গতিকে ভাষায় ব্যক্ত করিয়াছে, ইহার দ্বারাই মাস্থ্য আপনার সত্যতম পরিচয় দিয়াছে । সে পরিচয়টি এই যে, সীমাবদ্ধ প্রকৃতির মধ্যে মাজুষের স্বাভাবিক বিহারক্ষেত্র নহে, আনস্তের মধ্যেই মানুষের আনন্দ ; অহমের দিকই মাহুষের চরম সত্যের দিক নহে, ব্ৰন্ধের দিকেই তাহার সত্য । মাহয আপনার মধ্যে যে-একটি পরম ইচ্ছাকে পাইয়াছে, যে ইচ্ছা কোনোমতেই অল্পকে মানিতে চায় না, তাহা দুঃসহ তপস্তার মধ্য দিয়া জ্ঞানে বিজ্ঞানে শিল্পে সাহিত্যে মানুষের চিত্তকে আনন্দময় মুক্তির অভিমুখে কেবলই প্রবাহিত করিয়া চলিয়াছে এবং তাহা প্রেমভক্তি ও পবিত্রতায় মাছবের সমস্ত চেতনাথারাকে এক । অপরিসীম অতলম্পর্শ অমৃতপারাবারের মধ্যে উত্তীর্ণ করিয়া দিতেছে। মানুষের সেই পরম গতিকে যাহা-কিছু বাধা দেয়, যাহা তাহাকে বিপরীত দিকে টানে, তাহাই পাপ, তাহাই দুৰ্গতি, তাহাই তাহার মহতী বিনষ্ট । ২৩ জ্যৈষ্ঠ, বুধবার, ১৩১৯