পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী مe b ?) পোর্ট-সৈয়দে বাহারা জাহাজে চড়িল তাহারা প্রায় সকলেই ফরাসি। আমাদের ডেক এখন মাহৰে মাহুষে ভরিয়া গিয়াছে। এখন পরম্পরের দেহতরী র্যাচাইয়া চলিতে হইলে রীতিমত মাঝিগিরির প্রয়োজন হয়। * সকাল হইতে রাত্রি দশটা পর্যন্ত ডেকের উপর যুরোপীয় নরনারীদের প্রতিদিনের কালযাপন আমি আরও কয়েকবার দেখিয়াছি, এবারও দেখিতেছি। প্রথমটাই চোখে পড়ে, ইহারা সর্বদাই চঞ্চল হইয়া আছে। এতটা চাঞ্চল্য আমাদের অভ্যস্ত নহে । আমাদের গরম দেশে আমরা কোনোমতে ঠাও থাকিতে চাই— চোখের সামনে অন্য কেহ অস্থিরতা প্রকাশ করিলেও আমাদের গরম বোধ হয়। চুপ করে, স্থির থাকে, মিছামিছি কাজ বাড়াইয়ো না ইহাই আমাদের সমস্ত দেশের অনুশাসন । আর, ইহারা কেবলই বলে, ‘একটা-কিছু করা যাক।’ এইজন্ত ইহার ছেলে বুড়া সকলে মিলিয়া কেবলই দাপাদাপি করিতেছে। হালি গল্প খেলা আমোদের বিরাম নাই, অবসান নাই । অভ্যাসের বাধা সরাইয়া দিয়া আমি যখন এই দৃপ্ত দেখি আমার মনে হয়, আমি যেন বাহ প্রকৃতির একটা লীলা দেখিতেছি । যেন ঝরনা ঝরিতেছে, যেন নদী চলিতেছে, যেন গাছপালা বাতালে মাতামাতি করিতেছে। আপনার সমস্ত প্রয়োজন সারিয়াও প্রাণের বেগ আপনাকে নিঃশেষ করিতে পারিতেছে না ; তখন সে আপনার সেই উদ্ধৃবৃত্ত প্রাচুর্বের দ্বারা আপনাকেই আপনি প্রকাশ করিতেছে। আমরা যখন ছোটো ছেলেকে কোথাও সঙ্গে করিয়া লইয়া যাই তখন কিছু খেলনার আয়োজন রাখি ; নহিলে তাহাকে শাস্ত রাখা শক্ত হয়। কেননা, তাহার প্রাণের স্রোত তাহার প্রয়োজনের সীমাকে ছাপাইয়া চলিয়াছে। সেই উচ্ছলিত প্রাণের বেগ আপনার লীলার উপকরণ না পাইলে অধীর হইয়া উঠে। এইজন্তই ছেলেদের বিনা কারণে ছুটাছুটি করিতে হয়, তাহারা যে চেঁচামেচি করে তাহার কোনো অর্থই নাই এবং তাহাজের খেলা দেখিলে বিজ্ঞ ব্যক্তির হাসি জালে এবং কাহারও কাহারও বিরক্তি বোধ হয়। কিন্তু, তাহাঁদের এই খেলার উৎপাত আমাদের পক্ষে যত বড়ো উপত্ৰৰ হউক, খেলা বন্ধ করিলে উপজব আরও গুরুতর হইয়া উঠে गटचरु नार्हे । 普 # এই-ষে যুরোপীয় যাত্রীরা জাহাঙ্গে চড়িয়াছে, ইহাদের জন্তও কতরকম খেলার আয়োজন রাখিতে হইয়াছে তাহার আর সংখ্যা নাই। আমাদের যদি জাহাজ থাকিত তাহ হইলে তাল পাশা প্রভৃতি অত্যন্ত ঠাণ্ড খেলা ছাড়া এ-সমস্ত দৌড়ধাপের খেলার ব্যবস্থা করার দিকে আমরা দৃকপাতমাত্র করিতাম না। বিশেষত কয় দিনের জন্য পথ