পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

@ SS রবীন্দ্র-রচনাবলী লেখার মধ্যে আপনার সমস্ত চিত্তকে প্রয়োগ না করিয়া থাকিতে পারেন না । আমাদের দেশে খবরের কাগজে তাহার কোনো প্রয়োজন নাই ; আমরা লেখকের কাছে কোনো দায়িত্ব দাবি করি না, এই কারণে লেখকের শক্তি সম্পূর্ণ আলস্ত ত্যাগ করে না ও ফাকি দিয়া কাজ সারিয়া দেয়। এইজন্ত আমাদের সম্পাদকেরা লেখকদের শিক্ষা ও সতর্কতার কোনো প্রয়োজন দেখেন না, যে-লে লোক যাহ-তাহা লেখেন এবং পাঠকেরা তাহা নিবিচারে পড়িয়া যান। আমরা সত্যক্ষেত্রে চাষ করিতেছি না বলিয়াই আমাদের মঞ্জরীতে শক্ত-অংশ অতি সামান্ত দেখা যায়— মনের খাদ্য পুরাপুরি জন্মিতেছে না । আমাদের দেশে রাজ্যনৈতিক ও অন্তান্ত বিষয়ে আলোচনাসভা আমি দেখিয়াছি ; তাহাতে কথার চেয়ে কণ্ঠের জোর কত বেশি ! এখানে কিরূপ প্রশাস্ত ভাবে এবং কিরূপ প্রণিধানের সঙ্গে তর্কবিতর্ক চলিতে লাগিল । মতের অনৈক্যের দ্বারা বিষয়কে বাধা না দিয়া তাহাকে অগ্রসরই করিয়া দিল। অনেকে মিলিয়া কাজ করিবার অভ্যাস ইহাদের মধ্যে কত সহজ হইয়াছে তাহা এই ক্ষণকালের মধ্যে বুঝিতে পারিলাম। ইহাদের কাজ শুরুতর, অথচ কাজের প্রণালীর মধ্যে অনাবশ্বক সংঘর্ষ ও অপব্যয় লেশমাত্র নাই। ইহাদের রথ প্রকাও, তাহার গতিও দ্রুত, কিন্তু তাহার চাকা অনায়াসে ঘোরে এবং কিছুমাত্র শব্দ করে না । বন্ধু লগুনে আসিয়া একটা হোটেলে আশ্রয় লইলাম ; মনে হইল, এখানকার লোকালয়ের দেউড়িতে আনাগোনার পথে আসিয়া বসিলাম । ভিতরে কী হইতেছে খবর পাই না, লোকের সঙ্গে আলাপ-পরিচয়ও হয় না— কেবল দেখি, মাছুষ বাইতেছে আর আলিতেছে। এইটুকুই চোখে পড়ে, মামুষের ব্যস্ততার সীমা পরিসীমা নাই ; এত অত্যন্ত বেশি দরকার কিসের তাহা আমরা বুঝিতে পারি না। এই প্রচণ্ড ব্যস্ততার ধাক্কাটা কোনখানে গিয়া লাগিতেছে, তাহাতে ক্ষতি করিতেছে কি বৃদ্ধি করিতেছে তাহার কোনো হিসাব কেহ রাখিতেছে কি না কিছুই জানি না। চং ঢং করিয়া