পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

6 Ое রবীন্দ্র-রচনাবলী ইহার ধর্মোপদেশ ও কাব্যসমালোচনা আমি পূর্বেই পড়িয়াছি। সেদিন দেখিলাম, ছবি আঁকাতেও ইহার বিলাস । ইহার আঁকা প্রাকৃতিক দৃপ্তের ছবি ঘরের কোণে অনেক জমা হইয়া আছে। এগুলি সব মন হইতে স্বাকা । আমার চিত্রশিল্পী বন্ধু এই ছবিগুলি দেখিয়া বিশেষ করিয়া প্রশংসা করিলেন । এ ছবিগুলি যে প্রদর্শনীতে দিবার বা লোকের মনোরঞ্জন করিবার জন্ত তাহা নহে, ইহা নিতান্তই মনের লীলা মাত্র । সেই কথাই আমি ভাবিতেছিলাম— ইহার বয়স অনেক হইয়াছে, লেখাও অনেক লিখিতে হয়, শরীরও সম্পূর্ণ স্বস্থ নহে, কিন্তু ইহাতেও ইহার উত্তমের শেষ হয় নাই। জীবনীশক্তির প্রবলতা এত কাজের সঙ্গে খেলা করিবারও অবকাশ পায় ! বস্তুত এই খেলার দ্বারাই প্রাণের পরিচয় পাওয়া যায়। প্রয়োজনীয় কাজের চারি দিকে একটা মুক্তির ক্ষেত্রেই মানুষের ঐশ্বৰ। এ দেশে যাহারা খ্যাতিলাভ করিয়াছেন র্তাহাদের অনেকের মধ্যেই সেইটে লক্ষ্য করি। র্তাহারা যেটা লইয়া প্রধানত নিযুক্ত আছেন সেইটেতেই তাহাদের জীবনের সমস্ত জায়গা একেবারে ঠালিয়া ধরে নাই ; চারি দিকে খানিকটা ফাকা জায়গা আছে, সেইখানে তাহদের বিহার । খুব বড়ো বৈজ্ঞানিককে দেখিয়াছি, তাহার প্রধান শখ চীনদেশের চিত্রকলা । ইহাদের জীবনের তহবিলে বাড়তির ভাগ অনেকটা থাকে। ব্যবসায় ইহাদের অনেকের পক্ষেই একটা অংশমাত্র। আপিলঘর ইহাদের বাসগৃহের একটামাত্র ঘর। অনেক সিড়ি ভাঙিয়া উপরের তলার একটি ছোটো কামরায় ইহার সঙ্গে দেখা হইল। অনেকক্ষণ আমাদের দুইজনের নিভৃত আলাপের অবকাশ ঘটিয়াছিল। তাহার কথাবার্তা হইতে আমি এইটে বুঝিলাম যে, খৃস্টানধর্মের বাহ কাঠামো, যেটাকে ইংরেজি ভাষায় বলে creed, কোনোকালে তাহার যেমনই প্রয়োজন থাকৃ, এখন তাহাতে ধর্মের বিশুদ্ধ রসপ্রবাহের বাধা ঘটাইতেছে। মানুষের মন যখনি আপনার আশ্রয়কে ছাড়াইয়া বাড়িয়া উঠে তখন সেই আশ্রয়ের মতো শক্ৰ তাহার আর কেছ নাই। এ দেশে ধর্মের প্রতি অনেকের মন যে বিমুখ হইয়াছে তাহার প্রধান কারণ, ধর্মের এই বাহিরের আয়তনটা । তিনি আমাকে বলিলেন, “তোমার এই কবিতাগুলিতে কোনো ধর্মের কোনো creedএর কোনো গন্ধ নাই ; ইহাতে এগুলি আমাদের দেশের লোকের বিশেষ উপকারে লাগিৰে বলিয়া আমি মনে করি ' ' কথায় কথায় তিনি এক সময়ে আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, আমি জন্মান্তরে বিশ্বাস করি কি না । আমি বলিলাম, আমাদের বর্তমান জন্মের বাহিরের অবস্থা সম্বন্ধে কোনো স্থনির্দিষ্ট কল্পনা আমার মনে নাই এবং সে সম্বন্ধে জামি চিন্তা করা আৰপ্তক মনে করি না। কিন্তু, যখন চিকা করিয়া দেখি তখন মনে হয়, ইহা কখনো হইতেই