পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&శ్రీల রবীন্দ্র-রচনাবলী ততক্ষণ পদে পদে কথাবার্তার প্রবাহ উজ্জল চিন্তার কণায় ঝলমল করিতে লাগিল । কথার সঙ্গে কথার স্পর্শে আপনি স্ফুলিঙ্গ বাহির হইতে থাকে, মুহূর্তকাল বিলম্ব হয় না। ইহাতে স্পষ্ট দেখিতে পাওয়া যায়, ইহাদের মন প্রস্তুত হইয়াই আছে। ইহারা যে চিন্তা করিতেছেন তাছা নহে, চারি দিকের ঠেলায় ইহাদের নিয়ত চিন্তা করাইতেছে ; তাই ইহাদের মন ছুটিতে ছুটিতেও ভাবিতে পারে এবং ভাবিতে ভাবিতেও কথা কহিয়া যায়। ইহাদের ব্যক্তিগত মনের পশ্চাতে সমস্ত দেশের মন জাগিয়া আছে ; চিন্তার ঢেউ, কথার কল্লোল কেবলই নানা দিক হইতে নানা আকারে পরম্পরের চিত্তকে আঘাত করিতেছে। ইহাতে মনকে জাগ্রত ও মুখরিত না করিয়া থাকিতে পারে না । আমার বন্ধু চিত্রশিল্পী, কথার কারবার তাহার নহে। তাহার সঙ্গে আমার অনেকদিন অনেক আলাপ হইয়াছে ; সর্বদা ইহাই লক্ষ্য করিয়াছি, যে কথাটাই ইহার সম্মুখে উপস্থিত হয় তৎক্ষণাং সেটাকে ইনি জোরের সঙ্গে ভাবিতে পারেন ও জোরের সঙ্গে বলিতে পারেন। সে জোর কিছুমাত্র গায়ের জোর নহে, তাহা চিন্তার জোর । ইহার অনুভূতিশক্তিও দ্রুত এবং প্রবল। যেটা ভালো লাগিবার জিনিস সেটাকে ভালো লাগিতে ইহার ক্ষণমাত্র বিলম্ব হয় না, সে সম্বন্ধে ইহাকে আর-কাহারও মুখাপেক্ষা করিতে হয় না ; যেটাকে গ্রহণ করিতে হইবে সেটাকে ইনি একেবারেই অসংশয়ে গ্রহণ করেন । মানুষকে ও মামুষের শক্তিকে গ্রহণ করিবার সহজ ক্ষমতা ইহার এমন প্রবল বলিয়াই ইনি ইহার দেশের নানা শক্তিশালী নানা শ্রেণীর লোককে এমন করিয়া বন্ধুত্বপাশে বাধিতে পারিয়াছেন । তাহারা কেহ বা কবি, কেহ সমালোচক, কেহ বৈজ্ঞানিক, কেহ দার্শনিক, কেহ গুণী, কেহ জ্ঞানী, কেহ রসিক, কেহ রসজ্ঞ ; র্তাহারা সকলেই বিনা বাধায় এক ক্ষেত্রে মিলিবার মতো লোক নহেন, কিন্তু তাহার মধ্যে সকলেই মিলিতে পারিয়াছেন । আমার বন্ধুর সঙ্গে আলাপ করিতে গিয়া আমার ইহাই মনে হইতে থাকে, অনেক বিষয়েই ইহাদিগকে এখন আর গোড়া হইতেই ভাবিতে হয় না ; ইহারা অনেক কথা অনেক দূর পর্যন্ত ভাবিয়া রাখিয়াছেন। ভাবনার প্রথম ধাক্কাতেই যত বিলম্ব, তখনি জড়ত্ব ভাঙিতে সময় লাগে ; কিন্তু যখন তাহা কিছুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হইয়াছে তখন তাহার পক্ষে চলা সহজ। ইহাদের দেশে ভাবনা জিনিসটা চলার মুখেই আছে ; ৷ তাহার চাক আপনিই সরে। মাহুষের চিন্তার অধিকাংশ বিষয়ই মাৰ-রাস্তার। এইজন্ত ইহাদের কোনো শিক্ষিত লোকের সঙ্গে যখন আলাপ করা যায় তখন একেবারেই স্বচিন্তিত কথার ধারা পাওয়া যায়, এবং সেই ধারা দ্রুতগতিশীল ।