পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৫৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

&6 e 融, রবীন্দ্র-রচনাবলী মানুষের হাসিকান্নার সঙ্গে তাহার প্রত্যক্ষ সম্বন্ধ। আমাদের সংগীত মানুষের জীবনলীলার ভিতর হইতে উঠে না, তাহার বাহির হইতে বহিয়া আসে। যুরোপের সংগীতে মাস্থ্য আপনার ঘরের আলো, উৎসবের আলো, নানা রঙের ঝাড়ে লন্ঠনে বিচিত্র করিয়া জালাইয়াছে ; আমাদের সংগীতে দিগম্ভ হইতে চাদের আলো আসিয়া পড়িয়াছে। সেইজন্স বারবার ইহা অনুভব করিয়াছি, আমাদের সংগীত আমাদের স্থখছুঃখকে অতিক্রম করিয়া চলিয়া যায়। আমাদের বিবাহের রাত্রে রশনচোঁকিতে সাহানা বাজে। কিন্তু, সেই সাহানার তানের মধ্যে প্রমোদের ঢেউ খেলে কোথায় । তাহার মধ্যে যৌবনের চাঞ্চল্য কিছুমাত্র নাই, তাহা গম্ভীর, তাহার মিড়ের ভঁাজে ভজে করুণা। আমাদের দেশে আধুনিক বিবাহে সানাইয়ের সঙ্গে বিলাতি ব্যাও বাজানো বড়োমাছুষি বর্বরতার একটা অঙ্গ। উভয়ের প্রভেদ একেবারে স্বম্পষ্ট। বিলাতি ব্যাণ্ডের স্বরে মহিষের আমোদ-আহ্লাদের সমারোহ ধরণী কাপাইয়া তুলিতেছে ; যেমন লোকজনের ভিড়, যেমন হাস্যালাপ, যেমন সাজসজ্জা, যেমন ফুলপাত-আলোকের ঘট, ব্যাণ্ডের স্বরের উচ্ছ্বাসও ঠিক তেমনি । কিন্তু, বিবাহের প্রমোদসভাকে চারি দিকে বেষ্টন করিয়া যে অন্ধকার রাত্রি নিস্তন্ধ হইয়া আছে, যেখানে লোকলোকাস্তরের অনন্ত উৎসব নীরব নক্ষত্রসভায় প্রশাস্ত আলোকে দীপ্যমান, সাহানার স্বর সেইখানকার বাণী বহন করিয়া প্রবেশ করে । আমাদের সংগীত মান্থযের প্রমোদশালার সিংহদ্বারটা ধীরে ধীরে খুলিয়া দেয় এবং জনতার মাঝখানে অসীমকে আহবান করিয়া আনে। আমাদের সংগীত একের গান, একলার গান— কিন্তু তাহা কোণের এক নহে, তাহা বিশ্বব্যাপী এক । হার্মনি অতিমাত্র প্রবল হইলে গীতটিকে আচ্ছন্ন করিয়া ফেলে, এবং গীত যেখানে অত্যন্ত স্বতন্ত্র হইয়া উঠিতে চায় সেখানে হার্মনিকে কাছে আসিতে দেয় না। উভয়ের মধ্যে এই বিচ্ছেদটা কিছুদিন পর্যন্ত ভালো। প্রত্যেকের পূর্ণপরিণত রূপটিকে পাইবার জন্ত কিছুকাল প্রত্যেকটিকে স্বাতন্ত্র্যের অবকাশ দেওয়াই উচিত। কিন্তু, তাই বলিয়া চিরকালই তাঁহাদের আইবুড় থাকাটাকে শ্রেয় বলিতে পারি না। বর ও কন্যা যতদিন যৌবনের পূর্ণত না পায় ততদিন তাহাদের পৃথক হইয়া বাড়িতে দেওয়াই ভালো, কিন্তু তার পরেও যদি তাহারা মিলিতে না পারে তবে তাহারা অসম্পূর্ণ হইয়া থাকে। গীত ও হার্মনির যে মিলিবার দিন আলিয়াছে তাহাতে কোনো সন্দেহ নাই। সেই মিলনের আয়োজনও শুরু হইয়াছে। গ্রামে হস্তায় বিশেষ একদিন হাট বসে, বৎসরে বিশেষ একদিন মেলা হয়। সেইদিন পরম্পরের পণ্যবিনিময় করিয়া মানুষের বাহার বাহা অভাব আছে তাহ