পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* রবীন্দ্র-রচনাবলী هونا ফকির। শুনলেই তো বুঝতে পার, ঐ-ষে ও—ম, ওটা তো নিছক বায়ু-উদগার। পুণ্যবায়ু, জগৎ পবিত্র করে। - পুষ্প। এত সব জ্ঞানের কথা পেলে কোথা থেকে । আমরা হলে তো পাগল হয়ে যেতুম | ফকির। সবই গুরুর মুখ থেকে। তিনি বলেন, কলিতে গুরুর মুখই গোমুখী— মন্ত্রগঙ্গা বেরচ্ছে কলকল করে । পুপ। বি. এ.তে সংস্কৃতে অনাস্ নিয়ে খেটে মরেছি মিথ্যে । অজীর্ণ রোগেও ভুগেছি, সেটা কিন্তু পাকযন্ত্রের, ইড়াপিজলার নয় । ফকির। এতেই বুঝে নাও— গুরুর কৃপা। তাই তো আমার নাড়ির মধ্যে মন্তরটা প্রায়ই ডাক ছাড়ে গুরু গুরু গুরু শব্দে । পুপ। আচ্ছা, ডাকটা কি আহারের পরে বাড়ে । ফকির । তা বাড়ে বটে। পুষ্প । গুরু কী বলেন । ফকির। তিনি বলেন, পেটের মধ্যে স্থলে স্বক্ষে লড়াই, যেন দেবে দৈত্যে । খাদ্যের সঙ্গে মন্ত্রের বেধে যায় যেন গোলাগুলি-বর্ষণ, নাড়িগুলো উচ্চস্বরে গুরুকে স্মরণ করতে থাকে। হৈম । দুঃখের কথা আর কী বলব দিদি, পেটের মধ্যে গুরুর স্মরণ চলছে, বাইরেও বিরাম নেই। চরণদাস বাবাজি আছেন ওঁর গুরুভাই, সে লোকটার দয়ামায়া নেই, ওঁকে গান শেখাচ্ছেন । পাড়ার লোকেরা— পুষ্প । চুপ চুপ চুপ, পতিব্ৰতা তুমি । স্বামীর কণ্ঠ বপন চলে, সাধ্বীরা প্রাণপণে থাকেন নীরবে । ফকিরদা, গলায় গান শানাচ্ছ কেন, গান্ধিজির অহিংসানীতির কথা শোন নি । হৈম। তোমরা দুজনে তত্ত্বকথা নিয়ে থাকে। আমাকে যেতে হবে মাছ কুটতে। আমি চললুম। [ প্রস্থান ফকির। আমার কথাটা বুঝিয়ে বলি। গুরুর মন্ত্র, যাকে বলে গুরুপাক। খুব বেশি যখন জমে ওঠে অস্থন্থে তখন সমস্ত শরীরট ওঠে পাক দিয়ে নাচের ঘূর্ণি উঠতে থাকে পায়ের তলা থেকে উপরের দিকে স্বার, ঘানি ঘুরলে যেরকম জাওরাঞ্জ দিতে চায়, ভক্তির ঘোরে সেইরকম গানের আওয়াঙ্গ ওঠে গলার ভিতর দিয়ে। এই দেখোন এখনি সাধনার নাড়া লেগেছে একেবারে মূলাধার থেকে-উ । পুপ। কী সর্বনাশ! ভাক্তার ডাকব নাকি ।