পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষড়্‌বিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীক্স-রচনাবলী ه به এক কোণও নড়াতে পারলুম না, মন্তর আউড়েই চলল। ভয় হল, বুঝি ব্ৰহ্মদত্যি হবে। কিন্তু, মুখ দেখে বুঝলুম উপোষ করতে হতভাগা তিথিবিচার করছে না। ওর পাজিতে তিনটে চারটে একাদশী একসঙ্গে জমাট বেঁধে গেছে। জিজ্ঞাসা করলুম, বাবাজি, খাবে কিছু ? কপালে চোখ তুলে বললে, গুরুর কৃপা যদি হয় । মাঝে মাঝে দেখি মাথার নীচে পুথি রেখে নাক ডাকিয়ে ঘুমচ্ছেন, ডাকের শস্বে ও গাছের পাখি একটাও বাকি নেই। নাকের সামনে রেখে আসব কলার ছড়াটা । পুষ্প । লোকটার পরিচয় নিতে হবে তো। মাখন । নিশ্চয় নিশ্চয় । হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবে, আমার চেয়ে মজা । পুপ। ভালো হল। হনুমানের সঙ্গে অঙ্গদ চাই। ওকে তোমারই হাতে তৈরি করে নিতে হবে । শেওড়াফুলির হাট উজাড় করে কলার কাদি আনিয়ে নেব । মাখন। শুধু কলার কাদির কর্ম নয়। পুপ। তা নয় বটে। যে কারখানায় তুমি নিজে তৈরি সেখানকার দুই-চাকাওয়ালা যন্ত্রের তলায় ওকে ফেলা চাই । মাখন। দয়াময়ী, জীবের প্রতি এত হিংলা ভালো নয় । পুপ। ভয় নেই, আমি আছি, হঠাৎ অপঘাত ঘটতে দেব না। আপাতত কলার ছড়াটা ওকে দিয়ে এল । *. মাখন। আমাদের দেশে মেয়েরা থাকতে সন্ন্যাসী না খেয়ে মরে না । কিন্তু, ও লোকটা ভুল করেছে— বৈরাগির ব্যাবসা ওর নয়, ওর চেহারায় জলুষ নেই। নিতাস্ত নিজের স্ত্রী ছাড়া ওর খবরদারি করবার মানুষ মিলবে না । পুষ্প । তোমার অমন চেহারা নিয়ে তুমি ছ বছর চালালে কী করে। মাখন। ময়রার দোকানে মাছি তাড়িয়েছি, পেয়েছি বালি লুচি তেলে-ভাজা, যার খদের জোটে না । যাত্রার দলে ভিস্তি লেজেছি, জল খেতে দিয়েছেন অধিকারী মুড়কি আর পচা কলা । স্ববিধে পেলেই মা মালি পাতিয়ে মেয়েদের পাচালি শুনিয়ে দিয়েছি যখন পুরুষরা কাজে চলে গেছে— ওরে ভাই, জানকীরে দিয়ে এস বন— ওরে রে লক্ষ্মণ এ কী কুলক্ষণ, বিপদ ঘটেছে বিলক্ষণ । মী-জননীদের দুই চক্ষু দিয়ে অশ্রধারা করেছে— হু-চার দিনের সঞ্চয় নিয়ে এসেছি। আমাকে ভালোবালে সবাই । জ্যাঠাইমা আমার যদি ছুটে বিয়ে না দিত তা হলে চাই কি আমার নিজের গ্ৰীও হয়তো আমাকে ভালোবাসতে পারত। বাইরে থেকে বুঝতে পারবে না, কিন্তু আমারও কেমন অল্পেতেই মন গলে যায়। এই দেখে-না,