পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 〉〉の মুখের প্রত্যেক রেখা আলাদা করিয়া দেখিবার মতো তাহার চোখের অভিজ্ঞতা ছিল না। কেবল সেই উদবিগ্ন স্নেহে আনত তরুণ মুখের কোমলতামণ্ডিত উজ্জলতা বিনয়ের চোখে স্বষ্টির সদ্যঃপ্রকাশিত একটি নূতন বিস্ময়ের মতো ঠেকিল । একটু পরেই বৃদ্ধ অল্পে অল্পে চক্ষু মেলিম্বা “মা” বলিয়। দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিলেন । মেয়েটি তখন দুষ্ট চক্ষু ছলছল করিয়া বৃদ্ধের মুখের কাছে মুখ নিচু করিয়া আর্দ্রস্বরে জিজ্ঞাসা করিল, “বাবা, তোমার কোথায় লেগেছে ?” “এ আমি কোথায় এসেছি” বলিয়া বৃদ্ধ উঠিয়া বসিবার উপক্রম করিতেই বিনয় সম্মুখে আসিয়া কহিল, "উঠবেন না— একটু বিশ্রাম করুন, ডাক্তার আসছে।” তখন তাহার সব কথা মনে পড়িল ও তিনি কহিলেন, "মাথার এইখানটায় একটু বেদনা বোধ হচ্ছে, কিন্তু গুরুতর কিছুই নয় ।” সেই মুহূর্তেই ডাক্তার জুতা মচ মচ করিতে করিতে আসিয়া উপস্থিত হইলেন ; তিনিও বলিলেন, "বিশেষ কিছুই নয় ।" একটু গরম দুধ দিল্প অল্প ব্রান্তি খাইবার ব্যবস্থা করিয়া ডাক্তার চলিয়া যাঙ্গতেই বৃদ্ধ অত্যন্ত সংকুচিত ও ব্যস্ত হইয়া উঠিলেন । তাহার মেয়ে তাহার মনের ভাব বুঝিয়া কহিল, “বাবা, ব্যস্ত হচ্ছ কেন ? ডাক্তারের ভিজিট ও ওষুধের দাম বাড়ি থেকে পাঠিয়ে দেব ।” বলিয়। সে বিনয়ে মুখের দিকে চাহিল । সে কী আশ্চর্য চক্ষু ! সে চক্ষু বড়ো কি ছোটে, কালো কি কটা সে তর্ক মনেই আসে না— প্রথম নজরেই মনে হয়, এই দৃষ্টর একটা অসন্দিগ্ধ প্রভাব আছে । তাছাতে সংকোচ নাই, দ্বিধা নাই, তাহা একটা স্থির শক্তিতে পূৰ্ণ । বিনয় বলিতে চেষ্টা করিল, “ভিজিট অতি সামান্য, সেজন্মে— সে আপনারা— সে व्षोंभि-" মেয়েটি তাহার মুগের দিকে চাহিয়া থাকতে কথাটা ঠিকমতে শেষ করিতেই পারিল না। কিন্তু ভিজিটের টাকাটা যে তাহাকে লইতেই হইবে সে সম্বন্ধে কোনো সংশয় রহিল না । বৃদ্ধ কছিলেন, "দেখুন, আমার জন্তে ব্রাত্তি দরকার নেই—” কন্যা তাহাকে বাধা দিয়া কহিল, "কেন বাবা, ডাক্তারবাবু যে বলে গেলেন।" বৃদ্ধ কহিলেন, "ডাক্তাররা আমন বলে থাকে, ওটা ওদের একটা কুসংস্কার । আমার যেটুকু দুর্বলতা আছে একটু গরম দুধ খেলেই যাবে।" দুধ খাইয়া বল পাইলে বুদ্ধ বিনয়কে কহিলেন, "এবারে আমরা যাই । আপনাকে বড়ো কষ্ট দিলুম।"