পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

> ミ9 রবীন্দ্র-রচনাবলী বড়ো— গলার আওয়াজ এমনি মোট ও গম্ভীর যে হঠাৎ শুনিলে “কে রে" বলিয়া চমকিয়া উঠিতে হয়। তাহার মুখের গড়নও অনাবশ্যক রকমের বড়ো এবং অতিরিক্ত রকমের মজবুত ; চোয়াল এবং চিবুকের হাড় যেন দুর্গদ্বারের দৃঢ় অর্গলের মতো ; চোখের উপর ভ্ররেখা নাই বলিলেই হয় এবং সেখানকার কপালট কনের দিকে চওড়া হইয়া গেছে । ওষ্ঠাধর পাতলা এবং চাপা ; তাহার উপরে নাকটা খাড়ার মতো ঝু কিয়া আছে । দুই চোখ ছোটো কিন্তু তীক্ষ ; তাহার দৃষ্ট যেন তীরের ফলাটার মতো অতি দূর অদৃশ্বের দিকে লক্ষ ঠিক করিয়া আছে অথচ এক মুহূর্তের মধ্যেই ফিরিয়া আসিয়া কাছের জিনিসকেও বিহাতের মতো আঘাত করিতে পারে। গৌরকে দেখিতে ঠিক স্থ শ্ৰী বলা যায় না, কিন্তু তাহাকে না দেখিয়া থাকিবার জো নাই, সে সকলের মধ্যে চোখে পড়িবেই | আর তাহার বন্ধু বিনয় সাধারণ বাঙালি শিক্ষিত ভদ্রলোকের মতো নম্র, অথচ উজ্জল ; স্বভাবের সোঁকুমার্য ও বুদ্ধির প্রখরতা মিলিয়। তাছার মুখশ্ৰতে একটি বিশিষ্টতা দিয়াছে। কলেজে সে বরাবরই উচ্চ নম্বর ও বৃত্তি পঠিয়া আসিয়াছে ; গোরা কোনে। মতেই তাহার সঙ্গে সমান চলিতে পারিত না । পাঠ্যবিষয়ে গেরিার তেমন আসক্তিত্ব ছিল না ; বিনয়ের মতো সে দ্রুত বুঝিতে এবং মনে রাপিতে পারিত না । বিনষ্ট তাহার বাহন হইয়া কলেজের পরীক্ষা কয়টার ভিতর দিয়া নিজের পশ্চাতে তাচ কে টানিয়া পার করিয়া অনিয়াছে । গোরা বলিতেছিল, “শোনো বলি । অবিনাশ যে ব্রাহ্মদের নিন্দে করছিল, তাতে এই বোঝা যায় যে লোকটা বেশ সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় আছে । এতে তুমি হঠাৎ অমন খাপ হয়ে উঠলে কেন ?” বিনয় । কী আশ্চর্য । এ সম্বন্ধে যে কে নে প্রশ্ন চলতে পারে তাও আমি মনে করতে পারতুম না । গোরা । তা যদি হয় তবে তোমার মনে দোষ ঘটছে । এক দল লোক সমাজের বাধন ছিড়ে সব বিষয়ে উলটোরকম করে চলবে আর সমাজের লোক অবিচলিতভাবে তাদের স্ববিচার করবে এ স্বভাবের নিয়ম নয় । সমাজের লোকে তাদের ভুল বুঝবেষ্ট, তারা সোজা ভাবে ঘেটা করবে এদের চোখে সেট। বাকী ভাবে পড়বেঙ্গ, তাদের ভালে এদের কাছে মন্দ হয়ে দাড়াবেই, এক্সটেষ্ট হওয়া উচিত । ইচ্ছামত সমাজ ভেঙে বেরিয়ে যাওয়ার যতগুলো শাস্তি আছে এণ্ড তার মধ্যে একটা । বিনয় । যেটা স্বাভাবিক সেক্টটেই যে ভালো, তা আমি বলতে পারি নে। গোরা একটু উষ্ণ হইয়া উঠিয়া কহিল, “আমার ভালোয় কাজ নেই। পৃথিবীতে