পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা లరి কর্ম ব'লে দিনরাত বিভ্রান্ত হয়ে বেড়াচ্ছি— এই মরীচিকার ভিতর থেকে কি আমরা কোনোরকম চেষ্টায় প্রাণ পাব ! আমরা তাই প্রতিদিন শুকিয়ে মরছি । একটি সত্য ভারতবর্ষ আছে– পরিপূর্ণ ভারতবর্ষ, সেইখানে স্থিতি না হলে আমরা কি বুদ্ধিতে কি হৃদয়ে যথার্থ প্রাণরসট টেনে নিতে পারব না । তাই বলছি, আর সমস্ত ভুলে, কেতাবের বিদ্যে, খেতাবের মায়া, উষ্ণুকৃত্তির প্রলোভন, সব টান মেরে ফেলে দিয়ে সেই বন্দরের দিকেই জাহাজ ভাসাতে হবে— ডুবি তে ডুবব, মরি তো মরব । সাধে আমি ভারতবর্ষের সত্য মূর্তি, পূর্ণ মূর্তি কোনোদিন ভুলতে পারি নে " বিনয় । এ সব কেবল উত্তেজনার কথা নয় ? এ তুমি সত্য বলছ ? গোরা মেঘের মতো গৰ্জিয়া কহিল, “সত্যই বলছি ।” বিনয় । যারা তোমার মতো দেখতে পাচ্ছে না ? গোরা মুঠ বাধিয়া কহিল, “তাদের দেখিয়ে দিতে হবে । এই তো আমাদের কাজ । সত্যের ছবি স্পষ্ট না দেখতে পেলে লোকে আত্মসমপণ করবে কোন উপছায়ার কাছে ? ভারতবর্ষের সর্বাঙ্গীণ মূর্তিট। সবার কাছে তুলে ধরো— লোকে তা হলে পাগল হয়ে যাবে । তখন কি দ্বারে দ্বারে চাদ সেধে বেড়াতে হবে ? প্রাণ দেবার জন্তে ঠেল ঠেলি পড়ে যাবে ।” বিনয় । হয় আমাকে সংসারের দশ জনের মতো ভেসে চলে যেতে দাও নইলে আমাকে সেই মূর্তি দেখাও । গোরা । সাপনা করে । যদি বিশ্বাস মনে থাকে তা হলে কঠোর সাধনাতেই স্থখ পাবে । আমাদের শৌখিন পেঢ়ি য়টদের সত্যকার বিশ্বাস কিছুই নেই, তাই তারা নিজের এবং পরের কাছে কিছুই জোর করে দাবি করতে পারেন না । স্বয়ং কুবের যদি তাদের সেধে বর দিতে আসেন তা হলে তারা বোধ হয় লাটসাহেবের চাপরাশির গিলটি-করা তকমাটার চেয়ে বেশি আর কিছু সাহস করে চাইতেই পারেন না । তাদের বিশ্বাস নেই, তাই ভরসা নেই । বিনয় । গোরা, সকলের প্রকৃতি সমান নয় । তুমি নিজের বিশ্বাস নিজের ভিতরেই পেয়েছ, এবং নিজের আশ্রয় নিজের জোরেই থাড়া করে রাখতে পার, তাই অন্যের অবস্থা ঠিক বুঝতে পার না । আমি বলছি তুমি আমাকে যা হয় একটা কাজে লাগিয়ে দাও— দিনরাত আমাকে থাটিয়ে নাও— নইলে তোমার কাছে যতক্ষণ থাকি মনে হয় যেন একটা কী পেলুম, তার পরে দূরে গেলে এমন কিছু হাতের কাছে পাই নে যেটাকে অঁাকড়ে ধরে থাকতে পারি । গোরা। কাজের কথা বলছ ? এখন আমাদের একমাত্র কাজ এই যে, যা-কিছু