পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা >8ぬ ছু পা যাইতেই একটি বালক-কণ্ঠের চীংকারধ্বনি শুনিতে পাইল, “বিনয়বাবু, বিনয়বাৰু!” মুখ তুলিয়া দেখিল একটি ভাড়াটে গাড়ির দরজার কাছে ঝুকিয়া পড়িয়া সতীশ তাহাকে ডাকাডাকি করিতেছে । গাড়ির ভিতরের আসনে খানিকট শাড়ি থানিকটা সাদ জামার আস্তিন যেটুকু দেখা গেল তাহাতে আরোহীটি যে কে তাহ বুঝিতে কোনো সন্দেহ রহিল না । বাঙালি ভদ্রতার সংস্কার অনুসারে গাড়ির দিকে দৃষ্টি রক্ষা করা বিনয়ের পক্ষে শক্ত হইয়া উঠিল । ইতিমধ্যে সেইখানেই গাড়ি হইতে নামিয়া সতীশ আসিয়া তাহার হাত ধরিল ; কহিল, "চলুন আমাদের বাড়ি ।” বিনয় কহিল, “আমি যে তোমাদের বাড়ি থেকে এখনি আসছি ।” সতীশ । বা, আমরা যে ছিলুম না, আবার চলুন। সতীশের পীড়াপীড়ি বিনয় অগ্রাহ করিতে পারিল না । বন্দীকে লইয়া বাড়িতে প্রবেশ করিয়াই সতীশ উচ্চস্বরে কছিল, "বাবা, বিনয়বাবুকে এনেছি।” বৃদ্ধ ঘর হঠতে বহির হইয়া ঈষৎ হাসিয়া কহিলেন, “শক্ত হাতে ধরা পড়েছেন, শীঘ্র ছড়ি; পাবেন না । সতীশ, তোর দিদিকে ডেকে দে ।” বিনয় ঘরে আসিয়া বসিল, তাহার হৃৎপিণ্ড বেগে উঠিতে পড়িতে লাগিল । পরেশ কহিলেন, “স্থাপিয়ে পড়েছেন বুঝি ! সতীশ ভারি দুরন্থ ছেলে ।” ঘরে যখন সতীশ তা হার দিদিকে লষ্টয়া প্রবেশ করিল তখন বিনয় প্রথমে একটি মৃদু সুগন্ধ অনুভব করিল— তাহার পরে শুনিল পরেশবাবু বলিতেছেন, “রাধে, বিনয়বাবু এসেছেন । একে তো তুমি জানই ।” বিনয় চকিতের মতো মুখ তুলিয়া দেখিল, সুচরিতা তাহাকে নমস্কার করিয়া সামনের চেকিতে বসিল— এবার বিনয় প্রতিনমস্কার করিতে তুলিল না । স্বচরিতা কছিল, "উনি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন । ওঁকে দেখব:মাত্র সতীশকে আর ধরে রাখা গেল না, সে গাড়ি থেকে নেমেই ওঁকে টেনে নিয়ে এল । আপনি ছয়তো কোনো কাজে যাচ্ছিলেন— আপনার তো কোনো অসুবিধে হয় নি ?" স্বচরিতা বিনয়কে সম্বোধন করিয়া কোনো কথা কহিবে বিনয় তাহ প্রত্যাশাই করে নাই । সে কুষ্ঠিত হইয়া ব্যস্ত হইয়া বলিয়া উঠিল, "না, আমার কোনো কাজ ছিল না, অসুবিধে কিছুই হয় নি।” সতীশ স্বচরিতার কাপড় ধরিয়া টানিয়া কহিল, "দিদি, চাবিট দাও না। আমাদের সেই আর্গিনটা এনে বিনয়বাবুকে দেখাই ।”