পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা >bや এর নিজের ভিতরকার জীবনীশক্তিকে জাগিয়ে তুলব, তার পরে ছেদন করলেও রোগী সইতে পারবে, ছেদন না করলেও হয়তো রোগী সেরে উঠবে। গোরা বলেন, গভীর শ্রদ্ধাই আমাদের দেশের বর্তমান অবস্থায় সকলের চেয়ে বড়ো পথ্য– এই শ্রদ্ধার অভাবেই আমরা দেশকে সমগ্রভাবে জানতে পারছি নে— জানতে পারছি নে বলেই তার সম্বন্ধে যা ব্যবস্থা করছি তা কুব্যবস্থা হয়ে উঠছে । দেশকে ভালো না বাসলে তাকে ভালো করে জানবার ধৈর্য থাকে না, তাকে না জানলে তার ভালো করতে চাইলেও তার ভালো করা যায় না । স্বচরিতা একটু একটু করিয়া খোচা দিয়া দিয়া গোরার সম্বন্ধে আলোচনাকে নিবিতে দিল না। বিনয়ও গোরার পক্ষে তাহার যাহা কিছু বলিবার তাহ খুব ভালো করিয়াই বলিতে লাগিল । এমন যুক্তির কথা এমন দৃষ্টাস্ত দিয়া এমন গুছাইয়া আর কখনো যেন সে বলে নাই ; গেরা ও তfহার নিজের মত এমন পরিষ্কার করিয়া এমন উজ্জল করিয়া বলিতে পারিত কিনা সন্দেহ ; বিনয়ের বুদ্ধি ও প্রকাশক্ষমতার এই অপূর্ব উত্তেজনায় তাহার মনে একটা আনন্দ জন্মিতে লাগিল এবং সেই আনন্দে তাহার মুখ উদ্দীপ্ত হঠয় উঠিল । বিনয় কহিল, "দেখুন, শাস্বে বলে, আত্মানং বিদ্ধি– আপনাকে জানো । নইলে মুক্তি কিছুতেই নেই। আমি আপনাকে বলছি, আমার বন্ধু গোরা ভারতবর্ষের সেই আত্মবোধের প্রকাশ রূপে আবির্ভূত হয়েছে। তাকে আমি সামান্য লোক বলে মনে করতে পারি নে। আমাদের সকলের মন যখন তুচ্ছ আকর্ষণে নূতনের প্রলোভনে বাহিরের দিকে ছড়িয়ে পড়েছে তখন ওই একটিমাত্র লোক এই সমস্ত বিক্ষিপ্ততার মাঝখানে অটলভাবে দাড়িয়ে সিংহগর্জনে সেই পুরাতন মন্ত্র বলছে— আত্মানং বিদ্ধি ।” এই আলোচনা আরও অনেক ক্ষণ চলিতে পারিত— স্বচরিতাও ব্যগ্র হইয়া শুনিতেছিল— কিন্তু হঠাৎ পাশের একটা ঘর হইতে সতীশ চীংকার করিয়া আবৃত্তি আরম্ভ করিল— “বোলো না কাতর স্বরে না করি বিচার জীবন স্বপনসম মায়ার সংসার ।” বেচারা সতীশ বাড়ির অতিথি-অভ্যাগতদের সামনে বিদ্যা ফলাইবার কোনো অবকাশ পায় না। লীলা পর্যন্ত ইংরেজি কবিতা আওড়াইয়া সভা গরম করিয়া তোলে, কিন্তু সতীশকে বরদাসুন্দরী ডাকেন না । অথচ লীলার সঙ্গে সকল বিষয়েই সতীশের খুব একটা প্রতিযোগিতা আছে। কোনোমতে লীলার দর্প চূর্ণ করা সতীশের জীবনের প্রধান মুখ । বিনয়ের সম্মুখে কাল লীলার পরীক্ষণ হইয়া গেছে। তখন ७19रे