পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা bbrఏ চলবেই। সেজন্যে তার সঙ্গে তর্ক করে, তাকে গাল দাও— কিন্তু তার বিয়ে বন্ধ করে মাঝে থেকে আমার মেয়েটাকে শাস্তি দাও কেন ! তোমাদের সমস্তই উলটো বিচার ।” মহিম নীচে আসিয়া আনন্দময়ীকে কছিলেন, “মা, তোমার গোরাকে তুমি ঠেকাও ৷” আনন্দময়ী উদবিগ্ন হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, "কী হয়েছে ?” মহিম । শশিমুর্থীর সঙ্গে বিনয়ের বিবাহ আমি একরকম পাকা করেই এনেছিলুম। গোরাকেও রাজি করেছিলুম, ইতিমধ্যে গোরা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে যে বিনয় যথেষ্ট পরিমাণে হিন্দু নয়-- মচু পরাশরের সঙ্গে তার মতের একটু-আধটু অনৈক্য হয়ে থাকে। তাই গোরা বেঁকে দাড়িয়েছে— গোর বঁাকলে কেমন বঁাকে সে তো জানই । কলিযুগের জনক যদি পণ করতেন যে বাক গোরাকে সোজা করলে তবে সীতা দেব, তবে শ্রীরামচন্দ্র হার মেনে যেতেন এ আমি বাজি রেখে বলতে পারি। মসু-পরাশরের নীচেই পৃথিবীর মধ্যে সে একমাত্র তোমাকেই মানে। এখন তুমি যদি গতি করে দাও তো মেয়েটা তরে যায় । অমন পাত্র খুজলে পাওয়া যাবে না । এই বলিয়া গোরার সঙ্গে অrজ ছাতে যা কথাবার্ত হইয়াছে মহিম তাহ সমস্ত বিবৃত করিয়া কহিলেন । বিনয়ের সঙ্গে গোরার একটা বিরোধ যে ঘনাইয়া উঠতেছে ইহা বুঝিতে পারিয়া আনন্দময়ীর মন অত্যন্ত উদবিগ্ন হইয়া উঠিল । আনন্দময়ী উপরে আসিয়া দেখিলেন, গোরা ছাতে বেড়ানো বন্ধ করিয়া ঘরে একটা চৌকির উপর বসিয়া আর একটা চেকিতে পা তুলিয়া বই পড়িতেছে । আনন্দময়ী তাহার কাছে একটা চৌকি টানিয়া লইয়া বসিলেন । গোরা সামনের চৌকি হইতে পা নামাইয়া খাড়া হইয়া বসিয়া আনন্দময়ীর মুখের দিকে চাহিল। আনন্দময়ী কহিলেন, “বাবা গোরা, আমার একটি কথা রাখিস— বিনয়ের সঙ্গে ঝগড়া করিস নে । আমার কাছে তোরা দুজনে দুটি ভাই— তোদের মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে আমি সইতে পারব না ।" গোরা কহিল, "বন্ধু যদি বন্ধন কাটতে চায় তবে তার পিছনে ছুটোছুটি করে আমি সময় নষ্ট করতে পারব না ।” আনন্দময়ী কছিলেন, “বাবা, আমি জানি নে তোমাদের মধ্যে কী হয়েছে। কিন্তু বিনয় তোমার বন্ধন কাটাতে চাচ্ছে এ কথা যদি বিশ্বাস কর তবে তোমার বন্ধুত্বের জোর কোথায় ?” গোরা । মা, আমি সোজা চলতে ভালোবাসি, যারা দু দিক রাখতে চায় আমার