পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২০৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা ,》>° দুই জনে ঘুমাইয়া পড়িলে আনন্দময়ী আন্তে আস্তে ঘর হইতে বাহির হইয়া আসিলেন । সিড়ি দিয়া নামিবার সময় দেখিলেন, মহিম উপরে উঠিয়া আলিতেছেন । আনন্দময়ী কহিলেন, “এখন না— কাল সমস্ত রাত ওরা ঘুমোয় নি। আমি এইমাত্র ওদের ঘুম পাড়িয়ে আসছি।” মহিম কহিলেন, “বাস্ রে, একেই বলে বন্ধুত্ব । বিয়ের কথাটা উঠেছিল কি জান ?” আনন্দময়ী ৷ জানি নে । মহিম । বোধ হয় একটা কিছু ঠিক হয়ে গেছে । ঘুম ভাঙবে কখন ? শীঘ্র বিয়েটা না হলে বিঘ্ন অনেক আছে । আনন্দময়ী হাসিয়া কহিলেন, “ওরা ঘুমিয়ে পড়ার দরুণ বিঘ্ন হবে না— আজ দিনের মধ্যেই ঘুম ভাঙবে ।” 〉や বরদাসুন্দরী কহিলেন, “তুমি স্বচরিতার বিয়ে দেবে না নাকি ?” পরেশবাবু তাহার স্বাভাবিক শাস্ত গম্ভীর ভাবে কিছুক্ষণ পাকা দাড়িতে হাত বুলাইলেন– তার পর মুহম্বরে কহিলেন, “পাত্র কোথায় ?” বরদাসুন্দরী কহিলেন, "কেন, পামুবাবুর সঙ্গে ওর বিবাহের কথা তো ঠিক হয়েই আছে— অস্তত আমরা তো মনে মনে তাই জানি— স্বচরিতাও জানে।” পরেশ কছিলেন, “পাল্লুবাবুকে রাধারানীর ঠিক পছন্দ হয় বলে আমার মনে হচ্ছে না ।” বরদাসুন্দরী । দেখো, ওইগুলো আমার ভালো লাগে না । স্বচরিতাকে আমার আপন মেয়েদের থেকে কোনো তফাত করে দেখি নে, কিন্তু তাই বলে এ কথাও তো বলতে হয় উনিই বা কী এমন অসামান্ত ! পামুবাবুর মতো বিদ্বান ধাৰ্মিক লোক যদি ওকে পছন্দ করে থাকে, সেটা কি উড়িয়ে দেবার জিনিস ? তুমি যাই বল, আমার লাবণ্যকে তো দেখতে ওর চেয়ে অনেক ভালো, কিন্তু আমি তোমাকে বলে দিচ্ছি আমরা যাকে পছন্দ করে দেব ও তাকেই বিয়ে করবে, কখনো "না” বলবে না। তোমরা যদি স্বচরিতার দেমাক বাড়িয়ে তোল তা হলে ওর পাত্র মেলাই ভার হবে । পরেশ ইহার পরে আর কোনো কথাই বলিলেন না। বরদাস্বন্দরীর সঙ্গে তিনি কোনো দিন তর্ক করিতেন না । বিশেষত স্বচরিতার সম্বন্ধে ।