পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>ぬbr রবীন্দ্র-রচনাবলী সতীশকে জন্ম দিয়া যখন স্বচরিতার মার মৃত্যু হয় তখন স্বচরিতায় বয়স সাত । তাহার পিতা রামশরণ হালদার স্ত্রীর মৃত্যুর পরে ব্রাহ্মসমাজে প্রবেশ করেন এবং পাড়ার লোকের অত্যাচারে গ্রাম ছাড়িয়া ঢাকায় আসিয়া আশ্রয় লন । সেখানে পোস্ট, আপিসের কাজে যখন নিযুক্ত ছিলেন তখন পরেশের সঙ্গে তাহার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব হয়। স্বচরিতা তখন হইতে পরেশকে ঠিক নিজের পিতার মতোই জানিত । রামশরণের মৃত্যু হঠাৎ ঘটিয়ছিল। তাহার টাকাকড়ি যাহা-কিছু ছিল তাহা তাহার ছেলে ও মেয়ের নামে দুই ভাগে দান করিয়া তিনি উইল পত্রে পরেশবাবুকে ব্যবস্থা করিবার ভার দিয়াছিলেন । তখন হইতে সতীশ ও স্বচরিতা পরেশের পরিবারভূক্ত হইয়া গিয়াছিল । ঘরের বা বাহিরের লোকে স্বচরিতার প্রতি বিশেষ স্নেহ বা মনোযোগ করিলে বরদাসুন্দরীর মনে ভালো লাগিত না । অথচ দে কারণেই হউক স্বচরিতা সকলের কাছ হইতেই স্নেহ ও শ্রদ্ধা আকর্ষণ করিত। বরদাসুন্দরীর মেয়েরা তাহার ভালোবাসা লইয়া পরস্পরের সঙ্গে ঝগড়া করিত । বিশেষত মেজো মেয়ে ললিত তাহার ঈর্ষাপরায়ণ প্রণয়ের দ্বারা স্বচরিতাকে দিনরাত্ৰি যেন আকড়িয়া থাকিতে চাহিত । পড়াশুনার খ্যাতিতে র্তাহার মেয়েরা তখনকার কালের সকল বিদুষীকেই ছাড়াইয়। যাইবে বরদাসুন্দরীর মনে এই আকাঙ্ক্ষ ছিল । স্বচরিতা তাহার মেয়েদের সঙ্গে এক সঙ্গে মানুষ হইয়া এ সম্বন্ধে তাহদের সমান ফল লাভ করিবে ইহা তাহার পক্ষে সুখকর ছিল না । সেইজন্য ইস্কুলে যাইবার সময় সুচরিতার নানা প্রকার বিঘ্ন ঘটিতে থাকিত । সেই-সকল বিঘ্নের কারণ অতুমান করিয়া পরেশ স্বচরিতার ইস্কুল বন্ধ করিয়া দিয়া তাহাকে নিজেই পড়াইতে আরম্ভ করিলেন । শুধু তাই নয়, স্বচরিতা বিশেষভাবে প্তাহারই যেন সঙ্গিনীর মতে হইয়া উঠিল । তিনি তাহার সঙ্গে নানা বিষয়ে আলাপ করিতেন, যেখানে যাইতেন তাহাকে সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেন, যখন দূরে থাকিতে বাধ্য হইতেন তখন চিঠিতে বহুতর প্রসঙ্গ উত্থাপন করিয়া বিস্তারিত আলোচনা করিতেন । এমনি করিয়া স্বচরিতার মন তাহার বয়স ও অবস্থাকে ছাড়াইয়া অনেকটা পরিণত হইয়া উঠিয়াছিল । তাহার মুখশ্ৰীতে ও আচরণে যে-একটি গাম্ভীর্যের বিকাশ হইয়াছিল তাহাতে কেহ তাহাকে বালিকা বলিয়া গণ্য করিতে পারিত না ; এবং লাবণ্য যদিচ বয়সে প্রায় তাহার সমান ছিল তবু সকল বিষয়ে স্বচরিতাকুে সে আপনার চেয়ে বড়ো বলিয়াই মনে করিত, এমন-কি, বরদাসুন্দরীও তাহাকে ইচ্ছা করিলেও কোনোমতেই তুচ্ছ করিতে পারিতেন না । পাঠকের পূর্বেই পরিচয় পাইয়াছেন হারানবাৰু অত্যন্ত উৎসাহী ব্রান্ধ ; ব্রাহ্ম