পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা 것이 ( কি, তিনি মনে মনে একটু হাসিলেন। ভাবিলেন, এই দুইজনের মধ্যে হয়তে নিগূঢ় একটা প্রণয়কলহ ঘটিয়াছিল, আবার সেটা মিটমাট হইয়া গেছে । সেই দিন বিদায় হইবার সময় হারান পরেশবাবুর কাছে বিবাহের প্রস্তাব পাড়িলেন। জানাইলেন, এ সম্বন্ধে বিলম্ব করিতে র্তাহার ইচ্ছা নাই । পরেশবাবু একটু আশ্চর্য হঠয় কহিলেন, “কিন্তু আপনি যে আঠারে বছরের কমে মেয়েদের বিয়ে হওয়া অন্যায় বলেন । এমন-কি, আপনি কাগজেও সে কথা লিখেছেন ।” হারানবাবু কহিলেন, “স্বচরিতার সম্বন্ধে এ কথা খাটে না । কারণ, ওর মনের ঘে রকম পরিণতি হয়েছে অনেক বড়ো বয়সের মেয়েরও এমন দেখা যায় না ।” পরেশবাবু প্রশাস্ত দৃঢ়তার সঙ্গে কহিলেন, “তা হোক পাল্লুবাবু। যখন বিশেষ কোনো অহিত দেখা যাচ্ছে না তখন আপনার মত অনুসারে রাধারানীর বয়স পূর্ণ হওয়া পর্যস্ত অপেক্ষ করাই কতব্য ।” হারানবাবু নিজের দুর্বলতা প্রকাশ হওয়ায় লজ্জিত হইয়া কহিলেন, “নিশ্চয়ই কর্তব্য । কেবল আমার ইচ্ছা এই যে, এক দিন সকলকে ডেকে ঈশ্বরের নাম করে সম্বন্ধটা পাক করা হোক ৷” நற் পরেশবাবু কছিলেন, “সে অতি উত্তম প্রস্তাব।" Sዓ ঘণ্টা দুই-তিন নিদ্রার পর যখন গোরা ঘুম ভাঙিয়া পাশে চাহিয়া দেখিল বিনয় ঘুমষ্টিতেছে তখন তাহার হৃদয় আনন্দে ভরিয়া উঠিল । স্বপ্নে একটা প্রিয় জিনিস হারাহয় জাগিয়া উঠিয়া যখন দেখা যায় তাহা হারায় নাই তখন যেমন আরাম বোধ হয় গোরার সেইরূপ হইল। বিনয়কে ত্যাগ করিলে গোরার জীবন যে কতখানি পদু হইয় পড়ে অজ নিদ্রাভঙ্গে বিনয়কে পাশে দেখিয়া তাহা সে অনুভব করিতে পারিল । এই আনন্দের আঘাতে চঞ্চল হইয়া গোর ঠেলাঠেলি করিয়া বিনয়কে জাগাইয়া দিল এবং কহিল, "চলো একটা কাজ আছে।” গোরার প্রত্যহ সকালবেলায় একটা নিয়মিত কাজ ছিল । সে পাড়ার নিম্নশ্রেণীর লোকদের ঘরে যাতায়াত করিত । তাহদের উপকার করিবার বা উপদেশ দিবার জন্য নহে— নিতান্তই তাহদের সঙ্গে দেখাসাক্ষাং করিবার জন্যই যাইত । শিক্ষিত দলের মধ্যে তাহার এরূপ যাতায়াতের সম্বন্ধ ছিল না বলিলেই হয় । গোরাকে ইহার দাদাঠাকুর বলিত এবং কড়িবাধা হু কা দিয়া অভ্যর্থনা করিত। কেবলমাত্র