পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SRobr রবীন্দ্র-রচনাবলী নেই । নৌকার খোলে যদি ছিদ্র থাকে তবে নৌকার মাস্তুল কখনোই গায়ে ফু দিয়ে বেড়াতে পারবে না, তা তিনি যতই উচ্চে থাকুন-না কেন।” বিনয় নিরুত্তরে গোরার সঙ্গে সঙ্গে চলিতে লাগিল । গোর কিছুক্ষণ চুপ করিয়া চলিগ হঠাং বলিয়া উঠিল, "না, বিনয়, এ আমি কিছুতেই সহজে সহ করতে পারব না । ওই-ষে ভূতের ওঝা এসে আমার নন্দকে মেরে গেছে তার মার আমাকে লাগছে, আমার সমস্ত দেশকে লাগছে । আমি এই-সব ব্যাপারকে এক-একটা ছোটে এবং বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে কোনোমতেই দেখতে পারি নে ৷” 喃 তথাপি বিনয়কে নিরুত্তর দেখিয়া গোরা গর্জিয়া উঠিল, “বিনয়, আমি বেশ বুঝতে পারছি তুমি মনে মনে কী ভবিছ । তুমি ভাবছ এর প্রতিকার নেঃ কিম্বা প্রতিকারের সময় উপস্থিত হতে অনেক বিলম্ব আছে । তুমি ভাবছ, এই যে-সমস্ত ভয় এবং মিথ্যা সমস্ত ভারতবর্ষকে চেপে দাড়িয়ে রয়েছে ভারতবর্ষের এ বোঝা হিমাচলের মতো বোঝা, একে ঠেলে টলাতে পারবে কে ? কিন্তু আমি এরকম করে ভাবতে পারি নে, যদি ভাব তুম তা হলে বাঁচতে পারতুম না। ধ-কিছু আমার দেশকে আঘাত করছে তার প্রতিকfর আছেষ্ট, তা সে যতবড়ো প্রবল হোক – এবং একম { আমাদের হাতেই তার প্রতিকার আছে এই বিশ্বাস আমার মনে দৃঢ় আছে বলেই আমি চারি দিকের এত দুঃখ দুৰ্গতি অপমান সহ করতে পারছি ।" বিনয় কহিল, “এতবড়ো দেশজোড়া প্রকাণ্ড তুর্গতির সামনে বিশ্বাসকে খাড় করে রাখতে আমার সাহসই হয় না ।” গোর কহিল, "অন্ধকার প্রকাণ্ড আর প্রদীপের শিখা ছোটো । সেই এতবড়ো অন্ধকারের চেয়ে এতটুকু শিখার উপরে আমি বেশি আস্থা রাথি । গতি চিরস্থায়ী হতে পারে এ কথা আমি কোনোক্রমেই বিশ্বাস করতে পারি নে। সমস্ত বিশ্বের জ্ঞানশক্তি প্রাণশক্তি তাকে ভিতরে বাহিরে কেবলই আঘাত করছে, আমরা যে যতই ছোটে ইষ্ট সেই জ্ঞানের দলে প্রাণের দলে দাড়াব, দাড়িয়ে যদি মরি তবু এ কথা নিশ্চয় মনে রেখে সরব যে আমাদেরই দলের জিত হবে— দেশের জড়তাকেই সকলের চেয়ে বড়ো এবং প্রবল মনে ক’রে তারই উপর বিছানা পেতে পড়ে থাকব না । আমি তো বলি– জগতে শয়তানের উপরে বিশ্বাস স্থাপন করা আর ভূতের ভয় কর ঠিক একই কথা ; ওতে ফল হয় এই যে, রোগের সত্যকার চিকিৎসায় প্রবৃত্তিষ্ট হয় না । যেমন মিথ্য ভয় তেমনি মিথ্যা ওঝা— দুয়ে মিলেই আমাদের মারতে থাকে। বিনয়, আমি তোমাকে বার বার বলছি, এ কথা এক মুহূর্তের জন্তে স্বপ্নেও অসম্ভব বলে মনে কোরে না ৰে