পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর २SS নয় । আমাদের ভিতর প্রাণ ও স্বাস্থ্যের প্রাচুর্ধ ঘটলেই সমস্ত ঠিক হয়ে যাবে। গোর সেই জন্তে বার বার বলে যে, মাথা ধরে বলে মাথাটাকে উড়িয়ে দিলে চলবে না— স্বস্থ হও, সবল হও । স্বচরিতা । আচ্ছা, তা হলে আপনি ব্রাহ্মণ জাতকে নরদেবতা বলে মানতে বলেন ? আপনি সত্যি বিশ্বাস করেন ব্রাহ্মণের পায়ের ধুলোর মানুষ পবিত্র হয় ? বিনয় । পৃথিবীতে অনেক সম্মানষ্ট তো আমাদের নিজের সৃষ্টি । রাজাকে যতদিন যে কারণেই হোক দরকার থাকে ততদিন মাহুষ তাকে অসামান্য বলে প্রচার করে । কিন্তু রাজা তো সত্যি অসামান্ত নয় । অথচ নিজের সামান্ততার বাধা ভেদ করে তাকে অসীমান্ত হয়ে উঠতে হবে, নইলে সে রাজত্ব করতে পারবেই না । আমরা রাজার কাছে থেকে উপযুক্তরূপ রাজত্ব পাবার জন্তে তাকে অসামান্ত করে গড়ে তুলি — আমাদের সেই সম্মানের দাবি রাজাকে রক্ষা করতে হয়, তাকে অসামান্ত হতে হয় । মানুষের সকল সম্বন্ধের মধ্যেই এই কৃত্রিমতা আছে । এমন-কি, বাপ-মার যে আদর্শ আমরা সকলে মিলে পাড়া করে রেখেছি তাতে করেই সমাজে বাপ-মাকে বিশেষভাবে বাপ-মা করে রেখেছে, কেবলমাত্র স্বাভাবিক স্নেহে নয় । একান্নবর্তী পরিবারে বড়ো ভাই ছোটো ভাইয়ের জন্য অনেক সহ ও অনেক ত্যাগ করে— কেন করে ? আমাদের সমাজে দাদাকে বিশেষভাবে দাদা করে তুলেছে, অন্ত সমাজে তা করে নি। ব্রাহ্মণকেও যদি যথার্থভাবে ব্রাহ্মণ করে গড়ে তুলতে পারি তা হলে সে কি সমাজের পক্ষে সামান্ত লাভ ? আমরা নরদেবতা চাই— আমরা নরদেবতাকে যদি যথার্থই সমস্ত অস্তরের সঙ্গে বুদ্ধিপূর্বক চাই তা হলে নরদেবতাকে পাব । আর যদি মূঢ়ের মতে চাই তা হলে যে-সমস্ত অপদেবতা সকল রকম দুষ্কৰ্ম করে থাকে এবং আমাদের মাথার উপরে পায়ের ধুলে দেওয়া যাদের জীবিকার উপায় তাদের দল বাড়িয়ে ধরণীর ভার বৃদ্ধি করা হবে । সুচরিতা । আপনার সেই নরদেবতা কি কোথাও আছে ? বিনয় । বীজের মধ্যে যেমন গাছ জাছে তেমনি আছে, ভারতবর্ষের আস্তরিক অভিপ্রায় এবং প্রয়োজনের মধ্যে আছে। অন্ত দেশ ওয়েলিংটনের মতো সেনাপতি, নিউটনের মতো বৈজ্ঞানিক, রথচাইল্ডের মতো লক্ষপতি চায়, আমাদের দেশ ব্রাহ্মণকে চায় । ব্রাহ্মণ, যার ভয় নেই, লোভকে যে ঘৃণা করে, দুঃখকে যে জয় করে, অভাবকে যে লক্ষ করে না, যে পরমে ব্রহ্মণি যোজিতচিত্ত'। ৰে অটল, যে শাস্ত, ষে মুক্ত সেই ব্রাহ্মণকে ভারতবর্ষ চায়— সেই ব্রাহ্মণকে যথার্থভাবে পেলে তবেই ভারতবর্ষ স্বাধীন হবে । আমাদের সমাজের প্রত্যেক বিভাগকে প্রত্যেক কৰ্মকে সর্বদাই একটি মুক্তির