পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

९२b~ রবীন্দ্র-রচনাবলী মৌনর দ্বারা বিনয়কে অবজ্ঞা করিবে ইহাতে ললিতার কথার কাটা তাহাকে পুন:পুন: বিধিতে লাগিল । এই সময় মহিম হুক হাতে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করিলেন । ডিবা হইতে ভিজা স্বাকড়ার আবরণ তুলিয়া একটা পান বিনয়ের হাতে দিয়া কহিলেন, “বাবা বিনয়, এ দিকে তো সমস্ত ঠিক— এখন তোমার খুড়োমশায়ের কাছ থেকে একখানা চিঠি পেলেই যে নিশ্চিন্ত হওয়া যায়। তাকে তুমি চিঠি লিখেছ তো ?” এই বিবাহের তাগিদ আজ বিনয়কে অত্যন্ত খারাপ লাগিল, অথচ সে জানিত মহিমের কোনো দোষ নাই— তাহাকে কথা দেওয়া হইয়াছে। কিন্তু এই কথা দেওয়ার মধ্যে সে একটা দীনতা অনুভব করিল। আনন্দময়ী তো তাহাকে এক প্রকার বারণ করিয়াছিলেন– তাহার নিজেরও তো এ বিবাহের প্রতি কোনো আকর্ষণ ছিল না— তবে গোলেমালে ক্ষণকালের মধ্যেই এ কথাটা পাকিয়া উঠিল কী করিয়া ? গোরা যে ঠিক তাড়া লাগাঠয়াছিল তাহা তো বলা যায় না । বিনয় যদি একটু মনের সঙ্গে আপত্তি করিত তাহা হইলেও যে গোরা পীড়াপীড়ি করিত তাহা নহে। কিন্তু তবু ! সেই তবুটুকুর উপরেট ললিতার খোচা আসিয়া বিধিতে লাগিল । সেদিনকার কোনো বিশেষ ঘটনা নহে, কিন্তু অনেক দিনের প্রভূত্ব ইহার পশ্চাতে আছে । বিনয় নিতাস্তই কেবল ভালোবাসিয়া এবং একান্তই ভালোমামৃষি-বশত গোরার আধিপত্য অনায়াসে সহ করিতে অভ্যস্ত হইয়াছে । সেই জন্যই এই প্রভৃত্বের সম্বন্ধই বন্ধুত্বের মাথার উপর চড়িয়া বসিয়াছে। এতদিন বিনয় ইহা অন্স ভব করে নাই, কিন্তু আর তো ইহাকে অস্বীকার করিয়া চলে না । তবে শশিমুর্থীকে কি বিবাহ করিতেই কষ্টবে ? বিনয় কহিল, “ন, খুড়োমশায়কে এথনো চিঠি লেখা হয় নি।” মহিম কছিলেন, “ওটা আমারই ভূল হয়েছে । এ চিঠি তো তোমার লেপবার কথা নয়— ও আমিই লিখব । তার পুরো নামটা কী বলে তো বাবা ।” বিনয় কছিল, “আপনি ব্যস্ত হচ্ছেন কেন ? আশ্বিন-কার্তিকে তো বিবাহ হতেষ্ট পারবে না । এক অভ্রান মাস— কিন্তু তাতেও গোল আছে । আমাদের পরিবারের ইতিহাসে বহুপূর্বে অস্ত্রান মাসে কবে কার কী দুর্ঘটনা ঘটেছিল, সেই অবধি আমাদের বংশে অস্ত্রানে বিবাহ প্রভৃতি সমস্ত শুভকর্ম বন্ধ আছে।” মহিম ছকোটা ঘরের কোণের দেয়ালে ঠেস দিয়া রাখিয়া কছিলেন, “বিনয়, তোমরা যদি এ-সমস্ত মানবে তবে লেখাপড়া শেখাটা কি কেবল পড়া মুখস্থ করে মরা ? একে তো পোড়া দেশে শুভদিন খুঁজেই পাওয়া যায় না, তার পরে আবার ঘরে ঘরে প্রাইভেট পাজি খুলে বসলে কাজকর্ম চলবে কী করে ?”