পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

२७8 রবীন্দ্র-রচনাবলী গোরা । আচ্ছা, এবার থেকে বিনয়বোধ প্রথম ভাগ ধরানো যাবে । সেদিন দুই বন্ধুতে ঘুরিয়া ফিরিয়া কেবলই পরেশবাবুর মেয়েদের কথা হইতে হইতে রাত হইয়া গেল । গোরা একলা বাড়ি ফিরিবার পথে ওই-সকল কথাই মনের মধ্যে নাড়াচাড়া করিতে লাগিল এবং ঘরে আসিয়া বিছানায় শুইয়া যতক্ষণ ঘুম না আসিল পরেশবাবুর মেযেদের কথা মন হইতে তাড়াইতে পারিল না । গোরার জীবনে এ উপসর্গ কোনোকালেই ছিল না, মেয়েদের কথা সে কোনোদিন চিন্তামাত্রই করে নাই । জগদব্যাপারে এটাও ষে একটা কথার মধ্যে, এবার বিনয় তাহা প্রমাণ করিয়া দিল । ইহাকে উড়াইয়া দিলে চলিবে ন!, ইহার সঙ্গে হয় আপোষ নয় লড়াই করিতে হুইবে । পরদিন বিনয় যখন গোরাকে কহিল “পরেশবাবুর বাড়িতে একবার চলোই-না, — অনেকদিন যাও নি— তিনি তোমার কথা প্রায়ই জিজ্ঞাস করেন", তখন গোরা বিনা আপত্তিতে রাজি হইল । শুধু রাজি হওয়া নহে, তাহার মনের মধ্যে পূর্বের মতো নিরুংস্থক ভাব ছিল না। প্রথমে স্বচরিতা ও পরেশবাবুর কন্যাদের অস্তিত্ব সম্বন্ধে গোরা সম্পূর্ণ উদাসীন ছিল, তাহার পরে মধ্যে অবজ্ঞাপূর্ণ বিরুদ্ধ ভাব তাহার মনে জন্মিয়ছিল, এখন তাহার মনে একটা কৌতুহলের উদ্রেক হইয়াছে । বিনয়ের চিত্তকে কিসে যে এত করিয়া আকর্ষণ করিতেছে ত{হ জানিবার জন্য তাছার মনে একটা বিশেষ আগ্রহ জন্মিয়াছে । উভয়ে যখন পরেশবাবুর বাড়ি গিয়া পৌছিল তপন সন্ধ্যা হইয়াছে । দোতলার ঘরে একটা তেলের শেজ জালাইয় হারান তাহার একটা ইংরেজি লেখা পরেশবাবুকে শুনাইতেছিলেন । এ স্থলে পরেশবাবু বস্বত উপলক্ষম হ ছিলেন– স্বচরিতাকে শোনানোই তাহার উদ্দেশ্ব ছিল । স্বচরিতা টেবিলের দূরপ্রান্তে চোখের উপর হইতে আলো আড়াল করিবার জন্য মুখের সামনে একটা তালপাতার পাখা তুলিয়া ধরিয়া চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। সে আপন স্বাভাবিক বাধ্যতাবশত প্ৰবন্ধটি শুনিবার জন্য বিশেষ চেষ্টা করিতেছিল, কিন্তু থাকিয়া থাকিয়া তাছার মন কেবলই অন্ত দিকে যাইতেছিল । এমন সময় চাকর আসিয়া যখন গোরা ও বিনয়ের আগমন-সংবাদ জ্ঞাপন করিল তখন স্বচরিত হঠাং চমকিয় উঠিল। সে চৌকি ছাড়িয়া চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই পরেশবাবু কছিলেন, “রাধে, যাচ্ছ কোথায় ? আর কেউ নয়, আমাদের বিনয় আর গৌর এসেছে।” স্বচরিতা সংকুচিত হইয়া আবার বসিল । হারানের স্থদীর্ঘ ইংরেজী রচনা -পাঠে