পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ (t ૦ রবীন্দ্র-রচনাবলী পুলকিত আনন্দময়ী তাড়াতাড়ি তাহার লজ্জাট চাপা দিয়া কহিলেন, “বিনয় সঙ্গে যাবে বুঝি ?” গোরা ব্যস্ত হইয়া কহিল, "না মা, বিনয় যাবে না। ওই দেখো, অমনি মার মনে ভাবনা হচ্ছে, বিনয় না গেলে তার গোরাকে পথে ঘাটে রক্ষা করবে কে ? বিনয়কে যদি তুমি আমার রক্ষক মনে কর সেটা তোমার একটা কুসংস্কার— এবার নিরাপদে ফিরে এলে ওই সংস্কারটা তোমার ঘুচবে।” আনন্দময়ী জিজ্ঞাসা করিলেন, "মাঝে মাঝে খবর পাব তো ?” গোরা কহিল, “খবর পাবে না বলেই ঠিক করে রাখো— তার পরে যদি পাও তো খুশি হবে। ভয় কিছুই নেই ; তোমার গোরাকে কেউ নেবে না । মা, তুমি আমার যতটা মূল্য কল্পনা কর আর-কেউ ততটা করে না। তবে এই বেঁচেকাটির উপর যদি কারও লোভ হয় তবে এটি তাকে দান করে দিয়ে চলে আসব ; এটা রক্ষা করতে গিয়ে প্রাণ দান করব না— সে নিশ্চয় ।” গোর আনন্দময়ীর পায়ের ধুলা লইয়া প্ৰণাম করিল, তিনি তাহার মাথায় হাত বুলাইয়া হাত চুম্বন করিলেন, কোনোপ্রকার নিষেধমার করিলেন না। নিজের কষ্ট হইবে বলিয়া অথবা কল্পনায় অনিষ্ট আশঙ্কা করিয়া আনন্দময়ী কথনে কাহাকে ও নিষেধ করিতেন না । নিজের জীবনে তিনি অনেক বাধাবিপদের মধ্য দিয়; আসিয়াছেন, বাহিরের পৃথিবী তাহার কাছে অপরিচিত নহে ; তাহার মনে ভয় বলিয়া কিছু ছিল না । গোরা যে কোনো বিপদে পড়িবে সে ভয় তিনি মনে আনেন নাই— কিন্তু গোরার মনের মধ্যে যে কী একটা বিপ্লব ঘটিয়াছে সেই কথাই তিনি কাল হইতে ভাবিতেছেন । আজ হঠাৎ গোরা অকারণে ভ্রমণ করিতে চলিল শুনিয়া তাহার সেই ভাবনা আরও বাড়িয়া উঠিয়াছে । গোর পিঠে বেঁচেক বাধিয়া রাস্তায় যেই পা দিয়ছে এমন সময় হাতে ঘনরক্ত বসোরা গোলাপ-যুগল সযত্বে লইয়া বিনয় তাহার সম্মুখে আসিয়া উপস্থিত হইল । গোরা কহিল, “বিনয়, তোমার দর্শনে অযাত্রা কি স্বযাত্রা এবারে তার পরীক্ষা হবে ।” বিনয় কহিল, “বেরোচ্ছ না কি ?” গোরা কহিল, “ই ।” বিনয় জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় ?” গোরা কহিল, “প্রতিধ্বনি উত্তর করিল কোথায়’ ” বিনয়। প্রতিধ্বনির চেয়ে ভালো উত্তর নেই না কি ?