পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨૯૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী বাড়িতে সেই অভিনয়ে যোগ দেওয়ার প্রস্তাব লইয়া বিনয়কে বিস্তর কষ্ট পাইতে হইয়াছিল । এই অভিনয়ে ললিতার যে কোনো উৎসাহ ছিল তাহা নহে, সে বরঞ্চ এ-সব ব্যাপার ভালোই বাসিত না । কিন্তু কোনোমতে বিনয়কে এই অভিনয়ে জড়িত করিবার জন্য তাহার মনের মধ্যে যেন একটা জেদ চাপিয়া গিয়াছিল । যে-সমস্ত কাজ গোরার মতবিরুদ্ধ, বিনয়কে দিয়া তাহ সাধন করাইবার জন্য তাহার একটা রোধ জন্মিয়াছিল । বিনয় ষে গোরার অনুবতী, ইহা ললিতার কাছে কেন এত অসহ হইয়াছিল তাহা সে নিজেই বুঝিতে পারিতেছিল না। যেমন করিয়া হোক সমস্ত বন্ধন কাটিয়া বিনয়কে স্বাধীন করিয়া দিতে পারিলে সে যেন বঁাচে, এমনি হইয় ললিতা তাহার বেণী দুলাইয়া মাথা নাড়িয়া কহিল, "কেন মশায়, অভিনয়ে দোষটা कौ ?” } বিনয় কহিল, “অভিনয়ে দোষ না থাকতে পারে, কিন্তু ওই ম্যাজিস্ট্রেটের বাড়িতে অভিনয় করতে যাওয়া আমার মনে ভালে লাগছে না ।" ললিতা । আপনি নিজের মনের কথা বলছেন, ন; আর কারও ? বিনয় । অন্তের মনের কথা বলবার ভার আমার উপরে নেই, বল ও শক্ত । আপনি হয়তো বিশ্বাস করেন না, আমি নিজের মনের কথাটাই বলে থাকি – কখনে নিজের জবানিতে, কখনও বা অন্তের জবানিতে । ললিতা এ কথার কোনো জবাব না দিয়া একটুখানি মুচকিয়া হাসিল মাত্র । একটু পরে কহিল, "আপনার বন্ধু গৌরবাবু বোধ হয় মনে করেন ম্যাজিস্ট্রেটের নিমন্ত্রণ অগ্রাহ করলেই খুব একটা বীরত্ব হয়, ওতেই ইংরেজের সঙ্গে লড়াই করার ফল হয় ।” বিনয় উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া কহিল, "আমার বন্ধু হয়তো না মনে করতে পারেন, কিন্তু আমি মনে করি । লড়াই নয় তো কী ? যে লোক আমাকে গ্রাহাই করে না, মনে করে আমাকে কড়ে আঙুল তুলে ইশারায় ডাক দিলেই আমি কৃতাৰ্থ হয়ে যাব, তার সেই উপেক্ষার সঙ্গে উপেক্ষা দিয়েই যদি লড়াই না করি তা হলে আত্মসম্মানকে বঁাচাব কী করে ?” ললিতা নিজে অভিমানী স্বভাবের লোক, বিনয়ের মুখের এই অভিমানবাক্য তাহার ভালোই লাগিল। কিন্তু সেই জন্যই তাহার নিজের পক্ষের যুক্তিকে দুর্বল অনুভব করিয়াই ললিতা অকারণ বিদ্রুপের খোচায় বিনয়কে কথায় কথায় আহত করিতে লাগিল ।