পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা २¢¢ আরম্ভ করিয়াছিল । এইরূপে পাতা পুরাইবার জন্ত তাহার নেশা এতই চড়িয়া গিয়াছে যে ভালো বই দেখিলেও তাহা হইতে ছবি কাটিয়া লইবার জন্ত তাহার মন ছট্‌ফট্‌ করিত । এই লোলুপতার অপরাধে তাছার দিদিদের কাছে তাহাকে বিস্তর তাড়না সহ করিতে হইয়াছে । সংসারে প্রতিদান বলিয়া যে একটা দায় আছে সে কথাটা হঠাৎ আজ সতীশের সম্মুখে উপস্থিত হওয়াতে সে বিশেষ চিন্তিত হইয়া উঠিল । ভাঙা টিনের বাক্সটির মধ্যে তাহার নিজের বিষয়সম্পত্তি যাহা-কিছু সঞ্চিত হইয়াছে, তাহার কোনোটারই আসক্তিবন্ধন ছেদন করা তাহার পক্ষে সহজ নহে। সতীশের উদবিগ্ন মুখ দেখিয়া ললিত হাসিয়া তাহার গাল টিপিয়া দিয়া কহিল, “থাক থাক, তোকে আর অত ভাবতে হবে না। আচ্ছা, এই গোলাপ ফুল দুটো তাকে দিল ।” এত সহজে সমস্তার সীমাংসা হইল দেখিয়া সে উৎফুল্প হইয়। উঠিল । এবং ফুল দুটি লইয়া তখনই সে তাহার বন্ধঞ্চণ শোধ করিবার জন্ত চলিল । রাস্তায় বিনয়ের সঙ্গে তাহার দেখা হইল । ‘বিনয়বাবু বিনয়বাবু করিয়া দূর হইতে তাহাকে ডাক দিয়া সতীশ তাহার কাছে আসিয়া উপস্থিত হইল এবং জামার মধ্যে ফুল লুকাইয়া কহিল, "আপনার জন্তে কী এনেছি বলুন দেখি ” বিনয়কে হার মানাইয়া গোলাপ ফুল দুইটি বাহির করিল। বিনয় কছিল, “বা: কী চমৎকার! কিন্তু সতীশবাবু এটি তো তোমার নিজের জিনিস নয় । চোরাই মাল নিয়ে শেষকালে পুলিসের হাতে পড়ব না তো ?” এই ফুল ফুটিকে ঠিক নিজের জিনিস বলা যায় কি না, সে সম্বন্ধে সতীশের হঠাৎ ধোক লাগিল । সে একটু ভাবিয়া কছিল, "না, বা:, ললিতাদিদি আমাকে দিলেন ষে আপনাকে দিতে “ এই কথাটার এইখানেই নিম্পত্তি হইল এবং বিকালে তাছাদের বাড়ি যাইবে বলিয়া আশ্বাস দিয়া বিনয় সতীশকে বিদায় দিল । কাল রাত্রে ললিতার কথার খোচা থাইরা বিনয় তাহার বেদন তুলিতে পারিতেছিল না । বিনয়ের সঙ্গে কাহারও প্রায় বিরোধ হয় না । সেই জন্তু এই প্রকার তীব্র আঘাত সে কাহারও কাছে প্রত্যাশাই করে না । ইতিপূর্বে ললিতাকে বিনয় স্বচরিতার পশ্চাদবর্তিনী করিয়াই দেখিয়াছিল। কিন্তু অঙ্কুশাহত হাতি যেমন তাহার মাহুতকে ভূলিবার সময় পায় না, কিছুদিন হইতে ললিতা সম্বন্ধে বিনয়ের সেই দশা হইয়াছিল । কী করিয়া ললিতাকে একটুখানি প্রসন্ন করিবে এবং শান্তি পাইবে বিনয়ের এই চিন্তাই প্রধান হইয়া উঠিয়াছিল। সন্ধ্যার সময় বাসায় আসিয়া ললিতার