পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৬৯

গোরা ૨૮૧ সতীশ । আপনাকে । ললিত রক্তবর্ণ হইয়া উঠিয়া সতীশের পিঠে এক চাপড় মারিয়া কহিল, “তোর মতো বোকা তো আমি দেখি নি। বিনয়বাবুর ছবির বদলে তুই তাকে ফুল দিতে চাইলি নে ?” সতীশ হতবুদ্ধি হইয়া কহিল, “হা, তাই তো, কিন্তু তুমিই আমাকে দিতে বললে Fil ?” সতীশের সঙ্গে তকরার করিতে গিয়া ললিতা আরও বেশি করিয়া জালে জড়াইয়া পড়িল । বিনয় স্পষ্ট বুঝিল ফুল দুটি ললিতাই দিয়াছে, কিন্তু বেনামিতেই কাজ করা তাহার অভিপ্রায় ছিল । বিনয় কছিল, “আপনার ফুলের দাবি আমি ছেড়েই দিচ্ছি, কিন্তু তাই বলে আমার এই ফুলের মধ্যে ভুল কিছুষ্ট নেই । আমাদের বিবাদনিম্পত্তির শুভ উপলক্ষে এই ফুল কয়টি—” ললিতা মাথা নাড়িয়া কছিল, “আমাদের বিবাদই বা কী, আর তার নিম্পত্তিই বা কিসের ?” বিনয় কছিল, "একেবারে আগাগোড়া সমস্তই মায়া ? বিবাদও ভুল, ফুলও তাই, নিস্পত্তিও মিথ্যা ? শুধু শুক্তিতে রজত ভ্রম নয়, শুক্তিট-স্কন্ধই ভ্ৰম ? ওই-ষে ম্যাজিসট্রেট সাহেবের বাড়িতে অভিনয়ের একটা কথা হচ্ছিল সেটা—” ললিতা কহিল, “সেটা ভ্রম নয় । কিন্তু তা নিয়ে ঝগড়া কিসের ? আপনি কেন মনে করছেন আপনাকে এইটেতে রাজি করবার জন্তে আমি মস্ত একটা লড়াই বাধিয়ে দিয়েছি, আপনি সম্মত হওয়াতেই আমি কৃতাৰ্থ হয়েছি । আপন:র কাছে অভিনয় করাটা যদি অন্যায় বোধ হয় কারও কথা শুনে কেনই বা তাতে রাজি হবেন ?” এই বলিয়া ললিতা ঘর হইতে বাছির হইয়া গেল । সমস্তই উলট ব্যাপার হইল । আজ ললিতা ঠিক করিয়া রাখিয়াছিল যে, সে বিনয়ের কাছে নিজের হার স্বীকার করিবে এবং যাহাতে অভিনয়ে বিনয় যোগ না দেয় তাহাকে সেইরূপ অনুরোধ করিবে । কিন্তু এমন করিয়া কথাটা উঠিল এবং এমন ভাবে তাছার পরিণতি হইল যে, ফল ঠিক উলটা দাড়াইল । বিনয় মনে করিল, সে যে অভিনয় সম্বন্ধে এভদিন বিরুদ্ধতা প্রকাশ করিয়াছিল তাছারই প্রতিঘাতের উত্তেজনা এখনো ললিতার মনে রহিয়া গেছে । বিনয় যে কেবল বাহিরে হার মানিয়াছে, কিন্তু মনের মধ্যে তাহার বিরোধ রহিয়াছে, এই জন্ত ললিতার ক্ষোভ দূর হইতেছে না। ললিত এই ব্যাপারটাতে ষে এতটা আঘাত পাইয়াছে ইহাতে বিনয় ব্যখিত হইয়া উঠিল । সে মনে মনে স্থির করিল, এই