পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

૨ઉbr রবীন্দ্র-রচনাবলী কথাটা লইয়া সে আর কোনো আলোচনা উপহাসচ্ছলেও করিবে না এবং এমন নিষ্ঠা ও নৈপুণ্যের সঙ্গে এই কাজটাকে সম্পন্ন করিয়া তুলিবে যে কেহ তাহার প্রতি ঔদাসীন্তের অপরাধ আরোপ করিতে পরিবে না । স্বচরিতা আজ প্রাতঃকাল হইতে নিজের শোবার ঘরে নিভৃতে বসিয়া "স্টের অনুকরণ -নামক একটি ইংরেজি ধর্মগ্রন্থ পড়িবার চেষ্টা করিতেছে । আজ সে তাহার অন্যান্ত নিয়মিত কর্মে যোগ দেয় নাই। মাঝে মাঝে গ্রন্থ হইতে মন ভ্ৰষ্ট হইয়া পড়াতে বইয়ের লেখাগুলি তাহার কাছে ছায়া হইয়া পড়িতেছিল— আবার পরক্ষণে নিজের উপর রাগ করিয়া বিশেষ বেগের সহিত চিত্তকে গ্রন্থের মধ্যে আবদ্ধ করিতেছিল, কোনোমতেই হার মানিতে চাহিতেছিল না । এক সময়ে দূর হইতে কণ্ঠস্বর শুনিয়া মনে হইল, বিনয়বাবু আসিয়াছেন ; তখনই চমকিয়া উঠিয়া বই রাখিয়া বাহিরের ঘরে যাইবার জন্য মন ব্যস্ত হইয়া উঠিল । নিজের এই ব্যস্ততাতে নিজের উপর ক্রুদ্ধ হইয়া স্বচরিত আবার চৌকির উপর বসিয়া বই লইয়া পড়িল । পাছে কানে শব্দ যায় বলিয়া দুই কান চাপিয়া পড়িবার চেষ্টা করিতে লাগিল । এমন সময় ললিতা তাহার ঘরে আসিল । স্বচরিতা তাহার মুখের দিকে চাহিয়া কহিল, “তোর কী হয়েছে বল তো ।” ললিতা তীব্র ভাবে ঘাড় নাড়িয়া কহিল, “কিছু না ।” স্বচরিতা জিজ্ঞাসা করিল, “কোথায় ছিলি ?” ললিত কহিল, “বিনয়বাবু এসেছেন, তিনি বোধ হয় তোমার সঙ্গে গল্প করতে চান ৷” বিনয়বাবুর সঙ্গে আর কেহ আসিয়াছে কি না, এ প্রশ্ন স্বচরিতা আজ উচ্চারণ করিতেও পারিল না । যদি আর কেহ আসিত তবে নিশ্চয় ললিতা তাহার উল্লেখ করিত, কিন্তু তবু মন নি:সংশয় হইতে পারিল না । আর সে নিজেকে দমনের চেষ্টা না করিয়া গৃহাগত অতিথির প্রতি কর্তব্যের উপলক্ষে বাহিরের ঘরের দিকে চলিল । ললিতাকে জিজ্ঞাসা করিল, “তুই যাবি নে ?” ললিতা একটু অধৈর্যের স্বরে কহিল, “তুমি যাও-না, আমি পরে যাচ্ছি।” স্বচরিতা বাহিরের ঘরে প্রবেশ করিয়া দেখিল, বিনয় সতীশের সঙ্গে গল্প করিতেছে । স্ব চরিতা কহিল, “বাবা বেরিয়ে গেছেন, এখনই আসবেন । মা আপনাদের সেই অভিনয়ের কবিতা মুখস্থ করাবার জন্তে লাবণ্য ও লীলাকে নিয়ে মাস্টারমশায়ের