পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী هواج. বিনয়ের মনে বড়ে রাগ হইল— পাছে তাহা প্রকাশ পায় এই জন্ত সংক্ষেপে কহিল, “তিনি কলকাতায় নেই।” হারান। প্রচারে গেছেন বুঝি ? বিনয়ের রাগ বাড়িয়া উঠিল, কোনো জবাব করিল না । সুচরিতাও কোনো কথা না বলিয়া উঠিয়া চলিয়া গেল। হারানবাবু দ্রুতপদে স্বচরিতার অনুবর্তন করিলেন, কিন্তু তাহাকে ধরিয়া উঠিতে পারিলেন না । হারানবাবু দূর হইতে কহিলেন, “স্বচরিতা, একটা কথা আছে ।” সুচরিতা কহিল, "আজ আমি ভালো নেই।” বলিতে বলিতেই তাহার শয়নগৃহে কপাট পড়িল । এমন সময় বরদাসুন্দরী আসিয়া অভিনয়ের পালা দিবার জন্য যখন বিনয়কে আরএকটা ঘরে ডাকিয়া লইয়া গেলেন তাহার অনতিকাল পরেই অকস্মাং ফুলগুলিকে আর সেই টেবিলের উপরে দেখা যায় নাই । সে রাত্রে ললিতাও বরদাসুন্দরীর অভিনয়ের আখড়ায় দেখা দিল না, এবং স্বচরিতা বৃস্টের অন্সকরণ’ বইখানি কোলের উপর মুড়িয়া ঘরের বাতিটাকে এক কোণে আড়াল করিয়া দিয়া অনেক রাত পর্যস্ত দ্বারের বহির্বতী অন্ধকার রাত্রির দিকে চাহিয়া বসিয়া রছিল । তাহার সম্মুপে যেন একট। কোন অপরিচিত অপূর্ব দেশ মরীচিকার মতো দেখা দিয়াছিল ; জীবনের এতদিনকার সমস্ত জানাশুনার সঙ্গে সেই দেশের একটা কোথায় একাস্ত বিচ্ছেদ আছে ; সেইজন্য সেখানকার বাতায়নে যে আলোগুলি জলিতেছে তাহ তিমিরনিশাঁখিনীর নক্ষত্রমালার nuতা একটা স্বদূরতার রহস্তে মনকে ভীত করিতেছে ; অথচ মনে হইতেছে, ‘জীবন আমার তুচ্ছ, এতদিন যাহা নিশ্চয় বলিয়া জানিয়াছি তাহা সংশয়াকীর্ণ এবং প্রত্যহ যাহা করিয়া আসিতেছি তাহা অর্থহীন— ওইখানেই হয়তো জ্ঞান সম্পূর্ণ হইবে, কর্ম মহং হুইয়া উঠিবে এবং জীবনের সার্থকতা লাভ করিতে পারিব। ওই অপূর্ব অপরিচিত ভয়ংকর দেশের অজ্ঞাত সিংহদ্বারের সম্মুখে কে আমাকে দাড় করাইয়া দিল ? কেন আমার হৃদয় এমন করিয়া কঁাপিতেছে, কেন আমার পা অগ্রসর হইতে গিয়া এমন করিয়া স্তব্ধ হইয়া আছে ? ર૭ অভিনয়ের অভ্যাস উপলক্ষে বিনয় প্রত্যহষ্ট আসে । সুচরিতা তাছার দিকে একবার চাহিয়া দেখে, তাহার পরে হাতের বইটার দিকে মন দেয় অথবা নিজের ঘরে চলিয়া যায়। বিনয়ের একলা আসার অসম্পূর্ণতা প্রত্যহই তাহাকে আঘাত করে, কিন্তু