পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ՀԳ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী অসম্ভব হইত। সেই শশিমুখী আজ যখন বিনয়কে দেখিয়া তাড়াতাড়ি ঘর ছাড়িয়া পলাইয়া গেল তখন আনন্দময়ী হাসিলেন, কিন্তু সে হাসি সুখের হাসি নহে । বিনয়কেও এই ক্ষুদ্র ঘটনায় এমন আঘাত করিল যে, সে কিছুক্ষণের জন্ত চুপ করিয়া বসিয়া রছিল। বিনয়ের পক্ষে শশিমুর্থীকে বিবাহ করা যে কতখানি অসংগত তাহা এইরূপ ছোটোখাটো ব্যাপারেই ফুটিয় উঠে। বিনম্ন যখন সম্মতি দিয়াছিল তখন সে কেবল গোরার সঙ্গে তাহার বন্ধুত্বের কথাই চিন্তা করিয়াছিল, ব্যাপারটাকে কল্পনার দ্বারা অনুভব করে নাই । তা ছাড়া আমাদের দেশে বিবাহট যে প্রধানত ব্যক্তিগত নহে, তাহা পারিবারিক, এই কথা লইয়া বিনয় গৌরব করিয়া কাগজে অনেক প্রবন্ধ লিথিয়াছে ; নিজেও এ সম্বন্ধে কোনো ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা বিতৃষ্ণাকে মনে স্থানও দেয় নাই । আজ শশিমুখী ষে বিনয়কে দেখিয়া আপনার বর বলিয়া জিব কাটিয়া পলাইয়া গেল ইহাতে শশিমুখীর সঙ্গে তাহার ভাবী সম্বন্ধের একটা চেহারা তাহার কাছে দেখা দিল । মুহূর্তের মধ্যেই তাহার সমস্ত অস্ত:করণ বিদ্রোহী হইয়া উঠিল। গোরা যে তাহার প্রকৃতির বিরুদ্ধে তাহাকে কতদূর পর্যন্ত লইয়া যাইতেছিল ইহা মনে করিয়া গোরার উপরে তাহার রাগ হইল, নিজের উপরে ধিক্কার জন্মিল, এবং আনন্দময়ী ষে প্রথম হইতেই এই বিবাহে নিষেধ করিয়াছেন তাই স্মরণ করিয়। র্তাহার স্বক্ষদর্শিতায় তাহার প্রতি বিনয়ের মন বিস্ময়মিশ্রিত ভক্তিতে পূর্ণ হইয়া ऐंठल । আনন্দময়ী বিনয়ের মনের ভাবটা বুঝিলেন। তিনি অন্ত দিকে তাহার মনকে ফিরাইবার জন্য বলিলেন, “কাল গোরার চিঠি পেয়েছি বিনয় ।” বিনয় একটু অন্তমনস্ক ভাবেই কহিল, “কী লিখেছে ?” আনন্দময়ী কছিলেন, “নিজের খবর বড়ো একটা কিছু দেয় নি। দেশের ছোটোলোকদের দুর্দশা দেখে দুঃখ করে লিখেছে। ঘোষপাড়া বলে কোন-এক গ্রামে ম্যাজিস্ট্রেট কী সব অন্যায় করেছে তারই বর্ণনা করেছে।” গোরার প্রতি একটা বিরুদ্ধ ভাবের উত্তেজনা হইতেই অসহিষ্ণু হইয়া বিনয় বলিয়া উঠিল, “গোরার ওই পরের দিকেই দৃষ্টি, আর আমরা সমাজের বুকের উপরে বলে প্রতিদিন যে-সব অত্যাচার করছি তা কেবলই মার্জন করতে হবে, আর বলতে হবে এমন সৎকর্ম আর কিছু হতে পারে না !” হঠাৎ গোরার উপরে এইরূপ দোষারোপ করিয়া বিনয় যেন অন্ত পক্ষ বলিয়া নিজেকে দাড় করাইল দেখিয়া আনন্দময়ী হাসিলেন । বিনয় কছিল, “মা, তুমি হালছ, মনে করছ হঠাৎ বিনয় এমন রাগ করে উঠল