পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sbrs রবীন্দ্র-রচনাবলী হয়েছেন, আপনাকে যেতে বলছি এতে আমার অপরাধ হচ্ছে । কিন্তু আমাদের প্রতি আপনার দয়া আছে জেনেই বলছি, আপনি আমার এই বাড়িতে বসে পুলিলের অত্যাচারে যদি কোনো বাধা দেন তা হলে আমাকে বড়োই বিপদে ফেলবেন ।” নাপিতের এই ভয়কে অমূলক কাপুরুষতা মনে করিয়া গোরা কিছু বিরক্ত হইয়াই অপরাহ্লে তাহার ঘর ছাড়িয়া বাহির হইল । এই ম্লেচ্ছাচারীর ঘরে আহারাদি করিয়াছে মনে করিয়া তাহার মনের মধ্যে একট। অপ্রসন্নতাও জন্মিতে লাগিল । ক্লাস্তশরীরে এবং উত্ত্যক্তচিত্তে সন্ধ্যার সময়ে সে নীলকুঠির কাছারিতে আসিয়া উপস্থিত হইল । আহার সারিয়া রমাপতি কলিকাতায় রওনা হইতে কিছুমাত্র বিলম্ব করে নাই, তাই সেখানে তাহার দেখা পাওয়া গেল না । মাধব চাটুজ্জে বিশেষ খাতির করিয়া গোরাকে আতিথ্যে আহবান করিল । গোরা একেবারেই আগুন হইয়। উঠয় কহিল, “আপনার এখানে আমি জলগ্রহণ ও করব না ।” মাধব বিস্মিত হইয়া কারণ জিজ্ঞাস করিতেই গোরা তা9াকে অন্যায়কারী অত্যাচারী বলিয়া কটুক্তি করিল, এবং আসন গ্রহণ ন করিয় দাড়াইয়। রহিল । দারোগা তক্তপোশে বসিয়া তাকিয় আশ্রয় করিয়| গুড়গুড়িতে তামাক টানিতেছিল । সে খাড়া হইয়া বসিল এবং রূঢ়ভাবে জিজ্ঞাসা করিল, “কে হে তুমি ? তোমার বাড়ি কোথায় ?” গোরা তাহার কোনো উত্তর না করিয়া কহিল, “তুমি দারোগা বুঝি ? তুমি ঘোষপুরের চরে যে-সমস্ত উংপাত করেছ আমি তার সমস্ত খবর নিয়েছি । এখনও যদি সাবধান না হও তা হলে—” দারোগা । ফাসি দেবে না কি ? তাই তো, লোকটী কম নয় তো দেখছি । ভেবেছিলেম ভিক্ষে নিতে এসেছে, এ যে চোখ রাঙায় ওরে তে ওয়ারি ! মাধব ব্যস্ত হইয়া উঠিয়া দারোগার হাত চাপিয়া ধরিয়| কহিল, "আরে কর কী, ভদ্রলোক, অপমান কোরে না ।” দারোগ গরম হইয়া কহিল, “কিসের ভদ্রলোক ! উনি যে তোমাকে স্ব-খুশি-তাই বললেন, সেটা বুঝি অপমান নয় ?” মাধব কহিল, “যা বলেছেন সে তে মিথ্যে বলেন নি, তা রাগ করলে চলবে কী করে ? নীলকুঠির সাহেবের গোমস্তাগিরি করে থাই, তার চেয়ে আর তো কিছু বলবার দরকার করে না। রাগ কোরো না দাদা, তুমি যে পুলিসের দারোগ, তোমাকে যমের পেয়াদা বললে কি গাল হয় ? বাঘ মানুষ মেরে খায়, সে বোইম নয়, সে তো জানা কথা । কী করবে, তাকে তো খেতে হবে ।”