পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

sbrbr রবীন্দ্র-রচনাবলী তার পরে এই সাহেব-মারা মামলার তদন্তের চোটে এ অঞ্চলের লোক অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের ধারণা হয়েছে ভিতরে ভিতরে ভদ্রলোকের যোগ আছে ; হয়তো বা আমাকেও সন্দেহ করে, বলা যায় না । ইংরেজি কাগজগুলোতে ক্রমাগত লিখছে দেশী লোক মদি এরকম স্পর্ধ পায় তা হলে অরক্ষিত অসহায় ইংরেজরা আর মফস্বলে বাস করতেই পারবে না । ইতিমধ্যে দেশের লোক দেশে টিকতে পারছে না এমনি হয়েছে । অত্যাচার হচ্ছে জানি, কিন্তু কিছুই করবার জো নেই।" গোরা গৰ্জিয়া উঠিয়া কহিল, “কেন জো নেই ?” সাতকড়ি হাসিয়া কহিল, “তুমি ইস্কুলে যেমনটি ছিলে এখনো ঠিক তেমনটি আছ দেখছি। জো নেই মানে আমাদের ঘরে স্ত্রীপুত্র আছে– রোজ উপার্জন না করলে অনেকগুলো লোককে উপবাস করতে হয়। পরের দায় নিজের ঘাড়ে নিয়ে মরতে রাজি হয় এমন লোক সংসারে বেশি নেই– বিশেষত যে দেশে সংসার জিনিসটি বড়ো ছোটোখাটো জিনিস নয় । যাদের উপর দশ জন নির্ভর করে তারা সেই দশ জন ছাড়া অন্য দশ জনের দিকে তাকাবার অবকাশই পায় না ।" গোরা কহিল, “তা হলে এদের জন্যে কিছুই করবে না ? হাইকোর্টে মোশন ক’রে যদি—” সাতকড়ি অধীর হইয়া কহিল, “আরে, ইংরেজ মেরেছে যে— সেটা দেখছ না ! প্রত্যেক ইংরেজটিই যে রাজ্য— একট। ছোটো ইংরেজকে মারলেও যে সেটা একটা ছোটোরকম রাজবিদ্রোহ । যেটাতে কিছু ফল হবে না সেটার জন্যে মিথ্যে চেষ্টা করতে গিয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের কোপানলে পড়ব সে আমার দ্বারা হবে না ।" কলিকাতায় গিয়া সেখানকার কোনো উকিলের সাহায্যে কিছু সুবিধা হয় কি না তাহাই দেখিবার জন্য পরদিন সাড়ে দশটার গাড়িতে রওনা হইবার অভিপ্ৰায়ে গোরা যাত্রা করিয়াছে, এমন সময় বাধা পড়িয়া গেল । এখানকার মেলা উপলক্ষেই কলিকাতার একদল ছাত্রের সহিত এখানকার স্থানীয় ছাত্রদলের ক্রিকেট-যুদ্ধ স্থির হইয়াছে । হাত পাকাইবার জন্ত কলিকাতার ছেলেরা আপন দলের মধ্যেই খেলিতেছিল । ক্রিকেটের গোলা লাগিয়া একটি ছেলের পায়ে গুরুতর আঘাত লাগে । মাঠের ধারে একটা বড়ো পুষ্করিণী ছিল— আহত ছেলেটিকে দুইটি ছাত্র ধরিয়া সেই পুষ্করিণীর তীরে রাখিয়া চাদর ছিড়িয়া জলে ভিজাইয়া তাহার পা বাধিয়া দিতেছিল, এমন সময় হঠাৎ কোথা হইতে একটা পাহারাওয়ালা আসিয়াই একেবারে এক জন ছাত্রের ঘাড়ে হাত দিয়া ধাক্কা মারিয়া তাহাকে অকথ্য ভাষায় গালি দিল । পুষ্করিণীটি পানীয় জলের জন্য রিজার্ড-করা, ইহার জলে নামা নিষেধ,