পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর। 'పారీ २> আজ ছোটোলাট আলিবেন বলিয়া ম্যাজিসট্রেট ঠিক সাড়ে দশটায় আদালতে আসিয়া বিচারকার্য সকাল-সকাল শেষ করিয়া ফেলিতে চেষ্টা করিলেন । সাতকড়িবাবু ইস্কুলের ছাত্রদের পক্ষ লইয়া সেই উপলক্ষে তাহার বন্ধুকে বাচাইবার চেষ্টা করিলেন । তিনি গতিক দেখিয়া বুঝিয়াছিলেন যে, অপরাধ স্বীকার করাই এ স্থলে ভালো চাল । ছেলেরা দুরন্ত হইয়াই থাকে, তাহারা অর্বাচীন নির্বোধ ইত্যাদি বলিয়া তাহাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করিলেন । ম্যাজিস্ট্রেট ছাত্রদিগকে জেলে লইয়া গিয়া বয়স ও অপরাধের তারতম্য অনুসারে পাঁচ হইতে পচিশ বেতের আদেশ করিয়া দিলেন । গোরার উকিল কেহ ছিল না । সে নিজের মামলা নিজে চালাইবার উপলক্ষে পুলিলের অত্যাচার সম্বন্ধে কিছু বলিবার চেষ্টা করিতেই ম্যাজিসট্রেট তাহাকে তীব্র তিরস্কার করিয়া তাহার মুখ বন্ধ করিয়া দিলেন ও পুলিসের কর্মে বাধা দেওয়া অপরাধে তাহাকে এক মাস সশ্রম কারাদণ্ড দিলেন এবং এইরূপ লঘুদণ্ডকে বিশেষ দয়া বলিয়া কীর্তন করিলেন । স্বধীর ও বিনয় আদালতে উপস্থিত ছিল । বিনয় গোরার মুখের দিকে চাহিতে পারিল না , তাহার যেন নিশ্বাস বন্ধ হইবার উপক্রম হঠল, সে তাড়াতাড়ি আদালত-ম্বর হইতে বাহির হইয়া আসিল । স্বধীর তাহাকে ডাকবাংলায় ফিরিয়া গিয়া স্নানাহারের জন্ত অনুরোধ করিল— সে শুনিল না, মাঠের রাস্ত দিয়া চলিতে চলিতে গাছের তলায় বসিয়া পড়িল । সুধীরকে কহিল, "তুমি বাংলায় ফিরে যাও কিছুক্ষণ পরে আমি যাব।” স্বধীর চলিয় গেল । এমন করিয়া যে কতক্ষণ কাটিয়া গেল তাহা লে জানিতে পারিল না । স্বৰ্ষ মাথার উপর হইতে পশ্চিমের দিকে যখন হেলিয়াছে তখন একটা গাড়ি ঠিক ভtহার সম্মুখে আসিয়া থামিল। বিনয় মুখ তুলিয়া দেখিল, সুধীর ও স্বচরিতা গাড়ি হইতে নামিয়া তাহার কাছে আসিতেছে ; বিনয় তাড়াতাড়ি উঠিয়া দাড়াইল । সুচরিতা কাছে জালির স্নেহার্ডস্বরে কহিল, "বিনয়বাবু, আম্বন ।” বিনয়ের হঠাৎ চৈতন্ত হইল যে, এই দৃশ্বে রাস্তার লোকে কৌতুক অনুভব করিতেছে। সে তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠিয়া পড়িল । সমস্ত পথ কেহ কিছুই কথা কহিতে পারিল না । ভাকবাংলায় পৌঁছিয়া বিনয় দেখিল সেখানে একটা লড়াই চলিতেছে । ললিত বাকিয়া বলিয়াছে সে কোনোমতেই আজি ম্যাজিসট্রেটের নিমন্ত্রণে ৰোগ দিবে না। বরজাস্বন্দরী বিষম সংকটে পড়িয়া গিয়াছেন। হারানবাৰু ললিতার মতো বালিকার