পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ミぬ8 রবীন্দ্র-রচনাবলী এই অসংগত বিদ্রোহে ক্রোধে অস্থির হইয়া উঠিয়াছেন । তিনি বার বার বলিতেছেন, আজকালকার ছেলেমেয়েদের এ কিরূপ বিকার ঘটিয়াছে— তাহারা ডিসিপ্লিন মানিতে চাহে না ! কেবল ষে-সে লোকের সংসর্গে যাহ-তাহা আলোচনা করিয়াই এইরূপ ঘটিতেছে । বিনয় আসিতেই ললিত কহিল, “বিনয়বাবু, আমাকে মাপ করুন। আমি আপনার কাছে ভারি অপরাধ করেছি ; আপনি তখন যা বলেছিলেন আমি কিছুই বুঝতে পারি নি ; আমরা বাইরের অবস্থা কিছুই জানি নে বলেই এত ভুল বুঝি । পাল্লুবাবু বলেন ভারতবর্ষে ম্যাজিস্ট্রেটের এই শাসন বিধাতার বিধান – তা যদি হয় তবে এই শাসনকে সমস্ত কায়মনোবাক্যে অভিশাপ দেবার ইচ্ছা জাগিয়ে দেওয়াও সেই বিধাতারই বিধান ।” হারানবাবু ক্রুদ্ধ হইয়া বলিতে লাগিলেন, “ললিত, তুমি—” ললিত হারানবাবুর দিক হইতে ফিরিয়া দাড়াইয়। কহিল, "চুপ করুন। আপনাকে আমি কিছু বলছি নে । বিনয়বাবু, আপনি কারও অনুরোধ রাখবেন না। আজ কোনোমতেই অভিনয় হতেই পারে না।” বরদাসুন্দরী তাড়াতাড়ি ললিতার কথা চাপা দিয়া কহিলেন, “ললিতা, তুই তো আচ্ছা মেয়ে দেখছি । বিনয়বাবুকে আজ স্নান করতে খেতে দিবি নে ? বেল দেড়টা বেজে গেছে তা জানিস ? দেখ, দেপি ওঁর মুখ শুকিয়ে কী রকম চেহার হয়ে গেছে ।” বিনয় কহিল, “এখানে আমরা সেই ম্যাজিস্ট্রেটের অতিথি— এ বাড়িতে আমি স্নানাহার করতে পারব না ।” বরদাসুন্দরী বিনয়কে বিস্তর মিনতি করিয়া বুঝাইতে চেষ্টা করিলেন । মেয়েরা সকলেই চুপ করিয়া আছে দেখিয়া তিনি রাগিয়া বলিলেন, “তোদের সব হল কী ? স্বচি, তুমি বিনয়বাবুকে একটু বুঝিয়ে বলে-ন । আমরা কথা দিয়েছি— লোকজন সব ডাকা হয়েছে, আজকের দিনটা কোনোমতে কাটিয়ে যেতে হবে— নইলে ওরা কী মনে করবে বলে দেখি ! আর যে ওদের সামনে মুখ দেখাতে পারব না।” স্বচরিতা চুপ করিয়। মুখ নিচু করিয়া বসিয়া রছিল। বিনয় অদূরে নদীতে স্টীমারে চলিয়া গেল। এই স্টীমার জাজ ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই যাত্রী লইয়া কলিকাতায় রওনা হইবে— আগামী কাল আটটা জান্দাজ সময়ে সেখানে পৌছিবে । হারানবাবু উত্তেজিত হইয়া উঠিয়া বিনয় ও গোরাকে নিনা করিতে আরম্ভ