পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা S)●ぬ একবার ললিতার মুখের দিকে চকিতের মতো চাহিয়া লইলেন— বুঝিলেন, অদৃষ্ট্রের একটা লীলা চলিতেছে । অনতিবিলম্বে কোনো ছুতা করিয়া ললিত উঠিয়া তাহার ঘরে গেল। কত দিন সে নিজেকে নিজে এমন করিয়া কাদাইয়াছে । 93 বিনয় তখনি আনন্দময়ীর বাড়ির দিকে চলিল । লজ্জায় বেদনায় মিশিয়া মনের মধ্যে ভারি একটা পীড়ন চলিতেছিল । এতক্ষণ কেন সে মার কাছে যায় নাই ! কী ভুলই করিয়াছিল । সে মনে করিয়াছিল তাহাকে ললিতার বিশেষ প্রয়োজন আছে । সব প্রয়োজন অতিক্রম করিয়া সে যে কলিকাতায় আসিয়াই আনন্দময়ীর কাছে ছুটিয়া যায় নাই সেজন্য ঈশ্বর তাহাকে উপযুক্ত শান্তিই দিয়াছেন। অবশেষে আজ ললিতার মুখ হইতে এমন প্রশ্ন শুনিতে হইল, ‘গৌরবাবুর মার কাছে একবার যাবেন না ? কোনো এক মুহূর্তেও এমন বিভ্রম ঘটিতে পারে যখন গৌরবাবুর মার কথা বিনয়ের চেয়ে ললিতার মনে বড়ে হইয় উঠে ললিতা তাহাকে গৌরবাবুর মা বলিয়া জানে মাত্র, কিন্তু বিনয়ের কাছে তিনি যে জগতের সকল মায়ের একটিমাত্র প্রত্যক্ষ প্রতিম | তখন আনন্দময়ী সদ্য স্নান করিয়া ঘরের মেঝেয় আসন পাতিয়া স্থির হইয়া বসিয়া ছিলেন, বোধ করি বা মনে মনে জপ করিতেছিলেন । বিনয় তাড়াতাড়ি তাহার পায়ের কাছে লুটাইয় পড়িয়া কহিল, “মা !" আনন্দময়ী তাহার অবলুষ্ঠিত মাথায় দুই হাত বুলাষ্টয়া কহিলেন, “বিনয় ।” মার মতো এমন কণ্ঠস্বর কার আছে ! সেই কণ্ঠস্বরেই বিনয়ের সমস্ত শরীরে যেন করুণার স্পর্শ বহিয়া গেল । সে অশ্ৰুজল কষ্টে রোধ করিয়া মুক্তকণ্ঠে কহিল, “ম, আমার দেরি হয়ে গেছে !" আনন্দময়ী কছিলেন, “সব কথা শুনেছি বিনয় !" বিনয় চকিত হইয়া কহিল, “সব কথাই শুনেছ।" গোরা হাজত হইতেই তাহাকে পত্র লিখিয়া উকিলবাবুর হাত দিয়া পাঠাইয়াছিল । সে যে জেলে বাইবে সে কথা সে নিশ্চয় অনুমান করিয়াছিল । পত্রের শেষে ছিল— ‘কারাবাসে তোমার গোরার লেশমাত্র ক্ষতি করিতে পারিবে না । কিন্তু তুমি একটুও কষ্ট পাইলে চলিবে না। তোমার দুঃখই আমার দণ্ড,