পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোর। מכס কোনো সম্বন্ধই রাখি নাই— এবার আমি তাহদের সমান দাগে দাগি হইয়া বাহির হইতে চাই ; পৃথিবীর অধিকাংশ কৃত্রিম ভালোমানুষ যাহারা ভদ্রলোক সাজিয়া বসিয়া আছে তাহাদের দলে ভিড়িয়া আমি সম্মান বঁাচাইয়া চলিতে চাই না । ‘মা, এবার পৃথিবীর সঙ্গে পরিচয় হইয়া আমার অনেক শিক্ষণ হইয়াছে । ঈশ্বর জানেন, পৃথিবীতে যাহারা বিচারের ভার লইয়াছে তাহারাই অধিকাংশ কৃপাপাত্র । যাহারা দণ্ড পায় না, দণ্ড দেয়, তাহাদেরই পাপের শাস্তি জেলের কয়েদিরা ভোগ করিতেছে ; অপরাধ গড়িয়া তুলিতেছে অনেকে মিলিয়া, প্রায়শ্চিত্ত করিতেছে ইহারাই । যাহারা জেলের বাহিরে আরামে আছে, সম্মানে আছে, তাহাদের পাপের ক্ষয় কবে কোথায় কেমন করিয়া হইবে তাহা জানি না । আমি সেই আরাম ও সম্মানকে ধিক্কার দিয়া মামুষের কলঙ্কের দাগ বুকে চিহ্নিত করিয়া বাহির হইব ; মা, তুমি আমাকে আশীৰ্বাদ করো, তুমি চোখের জল ফেলিয়ে না । ভৃগুপদাঘাতের চিহ্ন শ্রীকৃষ্ণ চিরদিন বক্ষে ধারণ করিয়াছেন ; জগতে ঔদ্ধত্য যেখানে যত অন্যায় আঘাত করিতেছে ভগবানের বুকের সেই চিহ্নকেই গাঢ়তর করিতেছে । সেই চিহ্ন যদি তার অলংকার হয় তবে আমার ভাবন কী, তোমারই বা দুঃখ কিসের ? এই চিঠি পাইয়া আনন্দময়ী মহিমকে গোরার কাছে পাঠাইবার চেষ্টা করিয়াছিলেন । মহিম বলিলেন, আপিস আছে, সাহেব কোনোমতেই ছুটি দিবে না। বলিয়া গোরার অবিবেচনা ও ঔদ্ধত্য লইয়া তাহাকে যথেষ্ট গালি দিতে লাগিলেন ; কছিলেন, উহার সম্পর্কে কোনদিন আমার মৃদ্ধ চাকরিটি যাইবে । আনন্দময়ী কৃষ্ণদয়ালকে এ সম্বন্ধে কোনো কথা বলা অনাবশ্যক বোধ করিলেন । গোরা সম্বন্ধে স্বামীর প্রতি র্তাহার একটি মর্মাস্তিক অভিমান ছিল ; তিনি জানিতেন, কৃষ্ণদয়াল গোরাকে হৃদয়ের মধ্যে পুত্রের স্থান দেন নাই— এমন-কি, গোরা সম্বন্ধে তাহার অন্তঃকরণে একটা বিরুদ্ধ ভাব ছিল । গোরা আনন্দময়ীর দাম্পত্যসম্বন্ধকে বিন্ধ্যাচলের মতো বিভক্ত করিয়া মাকখানে দাড়াইয়া ছিল । তাহার এক পারে অতি সতর্ক শুদ্ধাচার লইয়া কৃষ্ণদয়াল এক, এবং তাছার অন্ত পারে তাহার ম্লেচ্ছ গোরাকে লইয়া একাকিনী আনন্দময়ী । গোরার জীবনের ইতিহাস পৃথিবীতে যে দুজন জানে তাহাদের মাঝখানে যাতায়াতের পথ যেন বন্ধ হইয়া গিয়াছে। এই-সকল কারণে সংসারে গোরার প্রতি আনন্দময়ীর স্নেহ নিতান্তই তাহার একলার ধন ছিল। এই পরিবারে গোরার অনধিকারে অবস্থানকে ՆԱՀ օ