পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী "ל צס\ ললিত কহিল, “আমাদের সম্বন্ধে বাবার কী কর্তব্য, আপনি মনে করেন, বাবার চেয়ে আপনি তা ভালো বোঝেন ! সমস্ত ব্রাহ্মসমাজের আপনিই হচ্ছেন হেডমাস্টার ” ললিতার এই প্রকার ঔদ্ধত্য দেখিয়া হারানবাবু প্রথমটা হতবুদ্ধি হইয়া গিয়াছিলেন । এইবার তিনি তাহাকে খুব একটা কড়া জবাব দিতে যাইতেছিলেন— ললিতা তাহাতে বাধা দিয়া তাহাকে কহিল, "এতদিন আপনার শ্রেষ্ঠত আমরা অনেক সহ করেছি, কিন্তু আপনি যদি বাবার চেয়েও বড়ো হতে চান তা হলে এ বাড়িতে আপনাকে কেউ সহ করতে পারবে না— আমাদের বেয়ারাট। পর্যন্ত না ।” হারানবাবু বলিয়া উঠিলেন, “ললিতা তুমি—” ললিতা তাহাকে বাধা দিয়া তীব্রম্বরে কহিল, "চুপ করুন। আপনার কথা আমরা অনেক শুনেছি, আজ আমার কথাটা শুনুন । যদি বিশ্বাস না করেন তবে সুচিদিদিকে জিজ্ঞাসা করবেন— আপনি নিজেকে যত বড়ো বলে কল্পনা করেন আমার বাবা তার চেয়ে অনেক বেশি বড়ো । এইবার আপনার যা-কিছু উপদেশ আমাকে দেবার আছে আপনি দিয়ে যান ।” হারানবাবুর মুখ কালো হইয়া উঠিল । তিনি চৌকি ছাড়িয়া উঠিয় কহিলেন, “স্বচরিতা !” স্বচরিতা বইয়ের পাতা হইতে মুখ তুলিল । হারানবাবু কহিলেন, “তোমার সামনে ললিতা আমাকে অপমান করবে !” স্বচরিতা ধীরস্বরে কহিল, “আপনাকে অপমান করা ওর উদ্দেশ্য নয়— ললিতা বলতে চায় বাবাকে আপনি সম্মান করে চলবেন । তার মতো সম্মানের যোগ্য আমরা তো কাউকেই জানি নে ৷” একবার মনে হইল হারানবাবু এখনি চলিয়া যাইবেন, কিন্তু তিনি উঠিলেন না । মুখ অত্যন্ত গম্ভীর করিয়া বসিয়া রহিলেন । এ বাড়িতে ক্রমে ক্রমে তাহার সন্ত্রম নষ্ট হইতেছে ইহা তিনি যতই অনুভব করিতেছেন ততই তিনি এগানে আপন আসন দখল করিয়া বসিবার জন্য আরও বেশি পরিমাণে সচেষ্ট হইয়া উঠিতেছেন । তুলিতেছেন যে, যে আশ্রয় জীর্ণ তাহাকে যতই জোরের সঙ্গে অঁাকড়িয়া ধরা যায় তাহা ততই ভাঙিতে থাকে । হারানবাবু রুষ্ট গাম্ভীর্যের সহিত চুপ করিয়া রছিলেন দেখিয়া ললিত উঠিয়া গিয়া স্বচরিতার পাশে বসিল এবং তাহার সহিত মুদুস্বরে এমন করিয়া কথাবার্তা আরম্ভ করিয়া দিল যেন বিশেষ কিছুই ঘটে নাই ।