পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৫

গোরা ৩২৩ না। শশিমুীর মার সঙ্গে বিনয়ের পরিচয় ছিল না বলিলেই হয়। তিনি যে ঠিক লাজুক ছিলেন তাহা নহে, কিন্তু অস্বাভাবিক রকমের গোপনচারিণী ছিলেন। তাছার ঘরের দরজা প্রায়ই বন্ধ । স্বামী ছাড়া তাহার আর সমস্তই তালাচাবির মধ্যে । স্বামীও যে যথেষ্ট খোলা পাইতেন তাহা নহে— স্ত্রীর শাসনে তাহার গতিবিধি অত্যন্ত স্বনির্দিষ্ট এবং তাহার সঞ্চরণক্ষেত্রের পরিধি নিতান্ত সংকীর্ণ ছিল । এইরূপ ঘের দিয়া লওয়ার স্বভাব-বশত শশিমুখীর মা লক্ষ্মীমণির জগংটি সম্পূর্ণ র্তাহার আয়ভের মধ্যে ছিল— সেখানে বহিরের লোকের ভিতরে এবং ভিতরের লোকের বাহিরে যাওয়ার পথ অবারিত ছিল না । এমন-কি, গেরিাও লক্ষ্মীমণির মহলে তেমন করিয়া আমল পাইত না । এই রাজ্যের বিধিব্যবস্থার মধ্যে কোনে। দ্বৈধ ছিল না । কারণ, এখানকার বিধানকর্তা ও লক্ষ্মীমণি এবং নিম্ন আদালত হইতে আপিল-আদালত পর্যস্ত সমস্তই লক্ষ্মীমণি— একৃজিকু্যটিভ এবং জুডিশিয়ালে তো ভেদ ছিলই না, লেজিসলেটিভও তাহার সহিত জোড়া ছিল । বাহিরের লোকের সঙ্গে ব্যবহারে মহিমকে খুব শক্ত লোক বলিয়াই মনে হইত, কিন্তু লক্ষ্মীমণির এলাকার মধ্যে র্তাহার নিজের ইচ্ছা থাটাইবার কোনে পথ ছিল না । সামান্ত বিষয়েও না । লক্ষ্মী মণি বিনয়কে আড়াল হইতে দেখিয়াছিলেন, পছন্দ ও করিয়াছিলেন । মহিম বিনয়ের বাল্যকাল হইতে গোরার বন্ধুরূপে তাহাকে এমন নিয়ত দেখিয়া আসিয়াছেন যে, অতিপরিচয়বশতই তিনি বিনয়কে নিজের কন্যার পাত্র বলিয়া দেখিতেই পান নাই । লক্ষ্মীমণি যপন বিনয়ের প্রতি তাহার দৃষ্টি আকর্ষণ করিলেন তখন সহধর্মিণীর বুদ্ধির প্রতি তাহার শ্রদ্ধা বাড়িয়া গেল। লক্ষ্মীমণি পাকা করিয়াই স্থির করিয়া দিলেন যে, বিনয়ের সঙ্গেই তাহার কন্যার বিবাহ হইবে । এই প্রস্তাবের একটা মস্ত স্থবিধার কথা তিনি তাহার স্বামীর মনে মুদ্রিত করিয়া দিলেন যে, বিনয় তাহাদের কাছ হইতে কোনো পণ দাবি করিতে পরিবে না। বিনয়কে বাড়িতে পাইয়াও দুই-এক দিন মহিম তাহাকে বিবাহের কথা বলিতে পারেন নাই । গোরার কারাবাস-সম্বন্ধে তাহার মন বিষন্ন ছিল বলিয়া তিনি নিরস্ত ছিলেন । আজ রবিবার ছিল। গৃহিণী মহিমের সাপ্তাহিক দিবানিদ্রাটি সম্পূর্ণ হইতে দিলেন না। বিনয় নূতন-প্রকাশিত বঙ্কিমের "বঙ্গদর্শন' লইয়া আনন্দময়ীকে শুনাইতেছিল— পানের ডিবা হাতে লইয়া সেইখানে জালিয়া মহিম তক্তপোশের উপরে ধীরে ধীরে বলিলেন । প্রথমত বিনকে একটা পান দিয়া তিনি গোরার উদ্ভূখল নিরবুদ্ধিতা লইয়