পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

రిరిన রবীন্দ্র-রচনাবলী পরেশবাবুর মেয়েদিগকে আনন্দময়ীর কেমন লাগিল সেই কথা শুনিবার জন্তই বিনয়ের মন ছট্‌ফট্‌ করিতেছিল । আনন্দময়ী কছিলেন, “বেশ, এইজন্তে তুই বুঝি আমাকে ডেকে আনলি ! আমি বলি, বুঝি কোনো কথা আছে।” বিনয় কহিল, “ন ডেকে আনলে এমন স্বর্যাস্তটি তো দেখতে পেতে না ।” সেদিন কলিকাতার ছাদগুলির উপরে অগ্রহায়ণের সুর্য মলিনভাবেই অস্ত যাইতেছিল— বর্ণচ্ছটার কোনো বৈচিত্র্য ছিল না— আকাশের প্রাস্তে ধূমলবর্ণের বাম্পের মধ্যে সোনার আভা অস্পষ্ট হইয়া জড়াইয়াছিল । কিন্তু এই মান সন্ধ্যার ধূসরতাও আজ বিনয়ের মনকে রাঙাইয়া তুলিয়াছে। তাহার মনে হইতে লাগিল, চারি দিক তাহাকে যেন নিবিড় করিয়া ঘিরিয়াছে, আকাশ তাহাকে যেন স্পর্শ করিতেছে । আনন্দময়ী কহিলেন, “মেয়ে দুটি বড়ো লক্ষ্মী ।” বিনয় এই কথাটাকে থামিতে দিল না । নানা দিক দিয়া এই আলোচনাকে জাগ্ৰত করিয়া রাখিল । পরেশবাবুর মেয়েদের সম্বন্ধে কতদিনকার কত ছোটোখাটো ঘটনার কথা উঠিয়া পড়িল— তাহার অনেকগুলিই অকিঞ্চিৎকর, কিন্তু সেই অগ্রহায়ণের মানায়মান নিভৃত সন্ধ্যায় নিরালা ঘরে বিনয়ের উৎসাহ এবং আনন্দময়ীর ঔৎসুক্য -দ্বারা এই-সকল ক্ষুদ্র গৃহকোণের অখ্যাত ইতিহাসখও একটি গম্ভীর মহিমায় পূর্ণ হইয়া উঠিল । ஆ আনন্দময়ী হঠাৎ এক সময়ে নিশ্বাস ফেলিয়া বলিয়া উঠিলেন, “স্বচরিতার সঙ্গে যদি গোরার বিয়ে হতে পারে তো বড়ে খুশি হই।” বিনয় লাফাইয়া উঠিল , কহিল, “মা, এ কথা আমি অনেক বার ভেবেছি । ঠিক গোরার উপযুক্ত সঙ্গিনী !” আনন্দময়ী । কিন্তু হবে কি ? বিনয় । কেন হবে না ? আমার মনে হয় গোরা যে স্বচরিতাকে পছন্দ করে না उछ| नश्ल ! গোরার মন যে কোনো এক জায়গায় আকৃষ্ট হইয়াছে আনন্দময়ীর কাছে তাহা অগোচর ছিল না । সে মেয়েটি যে স্বচরিতা তাহাও তিনি বিনয়ের নানা কথা হইতে সংগ্ৰহ করিয়াছিলেন। খানিক ক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া আনন্দময়ী কহিলেন, “কিন্তু স্বচরিতা কি হিন্দুর ঘরে বিয়ে করবে ?” বিনয় কহিল, “আচ্ছা মা, গোরা কি ব্রাক্ষর ঘরে বিয়ে করতে পারে না ? তোমার কি তাতে মত নেই ?”