পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গোরা f \ల9:) আমি আমাদের গুরুঠাকুরকে ভাকিয়া পাঠাইলাম। বলিলাম— ঠাকুর, অসহ দুঃখের হাত হইতে কী করিয়া বাচিব আমাকে বলিয়া দাও— উঠিতে বলিতে আমার কোথাও কোনো সাত্বনা নাই— আমি যেন বেড়া-আগুনের মধ্যে পড়িয়াছি ; যেখানেই যাই, যে দিকেই ফিরি, কোথাও আমার যন্ত্রণার এতটুকু অবসানের পথ দেখিতে পাই না । গুরু আমাকে আমাদের ঠাকুর-ঘরে লইয়া গিয়া কহিলেন– এই গোপীবল্লভই তোমার স্বামী পুত্র কন্যা সবই । ইহার সেবা করিয়াই তোমার সমস্ত শূন্ত পূর্ণ হইবে । আমি দিনরাত ঠাকুর-ঘরেই পড়িয়া রহিলাম। ঠাকুরকেই সমস্ত মন দিবার চেষ্টা করিতে লাগিলাম, কিন্তু তিনি নিজে না লইলে আমি দিব কেমন করিয়া ? তিনি লইলেন কই ? নীলকান্তকে ভাকিয়া কহিলাম— নীলুদাদা, আমার জীবনস্বত্ব আমি দেবরদেরই লিথিয় দিব স্থির করিয়াছি । তাহারা খোরাকি-বাবদ মাসে মাসে কিছু করিয়া টাকা দিবে। নীলকান্ত কহিল— সে কখনো হইতেই পারে না । তুমি মেয়েমানুষ এ-সব কথায় থাকিয়ো না । আমি বলিলাম— আমার আর সম্পত্তিতে প্রয়োজন কী ? নীলকান্ত কহিল— তা বলিলে কি হয় ! আমাদের যা হক তা ছাড়িব কেন ? এমন পাগলামি করিয়ো না । নীলকাস্ত হকের চেয়ে বড়ো আর কিছুই দেখিতে পায় না। আমি বড়ো মুশকিলেই পড়িলাম। বিষয়কৰ্ম আমার কাছে বিষের মতো ঠেকিতেছে— কিন্তু জগতে আমার ওই একমাত্র বিশ্বাসী নীলকান্তই আছে, তাহার মনে আমি কষ্ট দিই কী করিয়া ! লে যে বহু দুঃখে আমার ওই এক ‘হুক' বঁাচাইয়া আসিয়াছে। শেষকালে এক দিন নীলকান্তকে গোপন করিয়া একখানা কাগজে সহি দিলাম। তাহাতে কী যে লেখা ছিল তাহা ভালো করিয়া বুঝিয়া দেখি নাই । আমি ভাবিয়ছিলাম, আমার সই করিতে ভয় কী— আমি এমন কী রাথিতে চাই যাহা জার-কেহ ঠকাইয়া লইলে সহ হইবে না ! সবই তো আমার শ্বশুরের, র্তাহার ছেলেরা পাইবে, পাক । লেখাপড়া রেজোট হইয়া গেলে আমি নীলকান্তকে ডাকিয়া কছিলাম—