পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ষষ্ঠ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

७8२ রবীন্দ্র-রচনাবলী উহার প্রতি প্রসন্ন সে উহার মুখ দেখিলেই বোঝা যায়। পূজা পাইলেই ঠাকুর ভোলেন না, সে আমি খুব জানি— পরেশবাবু কেমন করিয়া তাহাকে বশ করিলেন সেই খবর আমি লইব । যাই হোক বাছা, একলা থাকিবীর সময় এখনো আমার হয় নাই— সে আমি পারি না— ঠাকুর যেদিন দয়া করেন করিবেন, কিন্তু তোমাদের কোলের কাছে না রাখিয়া আমি বাচিব না । ○ケ পরেশ বরদাসুন্দরীর অনুপস্থিতিকালে হরিমোহিনীকে আশ্রয় দিয়াছিলেন । ছাতের উপরকার নিভৃত ঘরে র্তাহাকে স্থান দিয়া যাহাতে র্তাহার আচার রক্ষা করিয়া চলার কোনো বিঘ্ন না ঘটে তাহার সমস্ত বন্দোবস্ত করিয়া দিয়াছিলেন । বরদাসুন্দরী ফিরিয়া আসিয়া তাহার ঘরকন্নার মধ্যে এই একটি অভাবনীয় প্রাদুর্ভাব দেখিয়া একেবারে হাড়ে হাড়ে জলিয়া গেলেন । তিনি পরেশকে খুব তীব্র স্বরেই কহিলেন, “এ আমি পারব না ।” পরেশ কহিলেন, “তুমি আমাদের সকলকেই সহ করতে পারছ, আর ওই একটি বিধবা অনাথাকে সইতে পারবে না ?” বরদাসুন্দরী জানিতেন পরেশের কাণ্ডজ্ঞান কিছুমাত্র নাই, সংসারে কিলে সুবিধা ঘটে বা অসুবিধা ঘটে সে সম্বন্ধে তিনি কোনোদিন বিবেচনামাত্র করেন না— হঠাৎ এক-একটা কাগু করিয়া বসেন । তাহার পরে রাগই করে, বকে আর কাদো, একেবারে পাষাণের মূর্তির মতো স্থির হইয়া থাকেন। এমন লোকের সঙ্গে কে পারিয়া উঠিবে বলে । প্রয়োজন হইলে যাহার সঙ্গে ঝগড়া করা ও অসম্ভব তাহার সঙ্গে ঘর করিতে কোন স্ত্রীলোক পারে! স্বচরিতা মনোরমার প্রায় একবয়সী ছিল । হরিমোহিনীর মনে হইতে লাগিল স্বচরিতাকে দেখিতেও যেন অনেকটা সেই মনোরমারই মতো ; আর স্বভাবটিও তাহার সঙ্গে মিলিয়াছে। তেমনি শাস্ত অথচ তেমনি দৃঢ়। হঠাৎ পিছন হইতে তাহাকে দেখিয়া এক-এক সময় হরিমোহিনীর বুকের ভিতরটা যেন চমকিয়া উঠে । এক-এক দিন সন্ধ্যাবেলায় অন্ধকারে তিনি একলা বলিয়া নিঃশব্দে কাদিতেছেন, এমন সময় স্বচরিতা কাছে আসিলে চোখ বুজিয়া তাহাকে দুই হাতে বুকে চাপিয়া ধরিয়া বলিতেন, “আহা, আমার মনে হচ্ছে, যেন আমি তাকেই বুকের মধ্যে পেয়েছি। লে যেতে চায় নি, আমি তাকে জোর করে বিদায় করে দিয়েছি, জগৎ-সংসারে কি কোনো দিন কোনোমতেই আমার সে শাস্তির অবসান হবে না । দণ্ড যা পাবার তা পেয়েছি—